বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে ইমপোর্ট ওভারডিউ (আমদানির বকেয়া) বা মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি দায় হিসেবে থাকা ৮০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দেশের ও বিদেশের প্রায় ৫০০ ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইওদের সঙ্গে এক অনলাইন সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বিদেশি ব্যাংকগুলোকে আশ্বস্ত করতেই এ সভার আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। এর আগে, বিভিন্ন আমদানি ব্যয়ের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধের জন্য দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সহায়তা চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই ধারবাহিকতায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে প্রায় প্রতিদিনই ডলার বিক্রি করছে। এখানে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সভার আলোচনা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, উপস্থিত ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর কিছু ওভারডিউ পেমেন্ট রয়েছে এবং সরকারের কাছেও তাদের কিছু পাওনা রয়েছে। তারা জানতে চেয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার কীভাবে এগুলো ক্লিয়ার করবে। গভর্নর তখন ব্যাংকগুলোকে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ৮০০ মিলিয়ন দায় পরিশোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ইন্টারব্যাংক মার্কেট থেকে ডলার সংগ্রহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এনার্জি, সার পেট্রোলিয়ামের মতো অগ্রাধিকার খাতগুলোর ইমপোর্ট পেমেন্ট ক্লিয়ার করছে।
সভায় গভর্নর পেমেন্ট ক্লিয়ার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উল্লেখ করে মুখপাত্র আরো বলেন, আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে ব্যাংকের সঙ্গে ক্লায়েন্টের যে সম্পর্ক সেটি অত্যন্ত নিবিড়। এটা এক বা দুই মাসের জন্য হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা বিপদগ্রস্ত অবস্থায় পড়েছে, এটা সত্য। কিন্তু অতীতেও আমাদের খেলাপি (ফরেন পেমেন্টে) হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই; বর্তমানেও আমরা মনে করছি, আমাদের যে ওভারডিউ রয়েছে, সেগুলো আমরা পরিশোধ করতে পারবো, যদি তারা (বিদেশি ব্যাংকগুলো) আমাদের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবসা অব্যাহত রাখে।
সভায় উপস্থিত বেসরকারি একটি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানিয়েছেন, বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশি অনেক ব্যাংকের নানান অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা থাকায় আমাদের ট্রেড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। তাই গভর্নর বিদেশি করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বসে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের ফরেক্স পরিস্থিতি সম্পর্কেও অবহিত করা হয়েছে তাদের। বিদেশি এতোগুলো ব্যাংকের সঙ্গে এবারই প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো গভর্নর সভা করেছেন বলে জানান এই ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
তিনি বলেন, এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ে গভর্নর বলেছেন, ক্রলিং পেগের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ রেটকে বাজারভিত্তিক রেটের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ক্রলিং পেগও থাকবে না। বাজারের চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে যে এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারিত হবে, সেভাবেই লেনদেন হবে।