খাগড়াছড়িতে চোর সন্দেহে পিটুনিতে এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার পর পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ কেন তিন পার্বত্য জেলা এমন অশান্ত হয়ে উঠলো সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিন পার্বত্য জেলায় সেনাবাহিনীর বেশ কড়াকড়ি অবস্থান দেখা গেছে। এই সংঘাত নিরসনে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য জেলাগুলোর পাড়ায় মহল্লায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের নিয়ে বৈঠক করছে জেলা প্রশাসন।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘দীঘিনালায় গত বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছে। যে কারণে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে।’
এই পরিস্থিতিরি জন্য একে অপরকে দায়ী করছে পাহাড়ি ও বাঙালি সংগঠনগুলো।
স্থানীয়দের দাবি, বিভিন্ন সময় নানা কারণে পার্বত্য তিন জেলার সংঘাত সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটলেও এবারের পরিস্থিতি হঠাৎই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
পাহাড়ি সংগঠনগুলো বলছে, পার্বত্য শান্তিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ের এই সংকট সহজে কাটবে না। যদিও পার্বত্য অঞ্চলের একটি বাঙালি সংগঠন হঠাৎই পাহাড় অশান্ত হওয়ার পেছনে অন্য রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে দাবি করেছে।
ঘটনার শুরু হয়েছিল বাইক চুরিকে কেন্দ্র করে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর এক বাঙালিকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় স্থানীয় বাঙালি শিক্ষার্থীরা দীঘিনালা সরকারি কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে লারমা স্কয়ারে এলে তাদের বাধা দেয় পাহাড়িরা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালায় বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বাঙালিদের অভিযোগ, মিছিলটি বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।
দীঘিনালার কয়েকজন বাঙালি অভিযোগ করে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পাহাড়িদের কেউ কেউ হঠাৎই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলি চালাতে শুরু করে। যে কারণে আরো বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালিরা। তবে পাহাড়িদের অনেকে অভিযোগ করে বলেছেন, বাঙালি ছাত্রদের মিছিলটি ছিল উস্কানিমূলক যেটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।
আগের দিনের ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ির পাশাপাশি রাঙামাটিতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খাগড়াছড়িতে তিন পাহাড়ির মৃত্যু এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সকালে রাঙামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন পাহাড়িরা। মিছিলে ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ ৩০-৪০টি বাড়িঘর ও দোকানপাটে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে পাহাড়ি সংগঠনের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটন এলাকায় প্রায় দেড় হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। সেখানে খাবার ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনে ও অসুস্থতার কারণে হেলিকপ্টারে করে ফিরছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা