খুচরা বিক্রেতারা তাদের ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে ইলিশ বিক্রি করছেন। এতে বিপুল পরিমাণ মুনাফা পকেটে ভরছেন তারা। অন্যদিকে বেশিরভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে মাছটি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক তদন্তে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
বুধবার কাওরান বাজার ও যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে বিশেষ অভিযান চালিয়ে অধিদপ্তর দেখতে পেয়েছে, খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি বাজার থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকা কেজিতে ইলিশ কিনে দুই হাজার ২০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করছেন। এতে প্রতি কেজি ইলিশে তারা ৭৫০ টাকা মুনাফা করছেন। ভোক্তা অধিদপ্তর খুচরা বিক্রেতাদের অতিরিক্ত মুনাফাকে ইলিশের দাম বাড়ার পেছনে একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, দেড় কেজির ইলিশ পাইকারিতে প্রতি কেজি ১,৮০০ টাকায়, এক কেজির ইলিশ ১,৬০০ টাকায় এবং ৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ ১,৪৫০-১,৪৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আধা কেজি ওজনের ইলিশের পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা কেজিদরে। খুচরা বাজারে এসব মাছ আকারভেদে ৩০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
অধিদপ্তরের ঢাকা অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার ম-ল বলেন, ‘ইলিশের বর্তমান খুচরা মূল্য অযৌক্তিক। পাইকারি বিক্রেতারা রশিদ দিচ্ছেন না, যা দাম বাড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।’ কাওরান বাজারে অভিযানের নেতৃত্বদানকারী এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা (ইলিশ বিক্রেতারা) ভোক্তাদের ঠকাতে ওজনেও কারসাজি করছেন।’
কাওরান বাজারে অভিযানের সময় কর্মকর্তারা দেখতে পান, পাইকারি বিক্রেতারা ইলিশের বিক্রির সঠিক রেকর্ড রাখছেন না বা নগদ মেমো দিচ্ছেন না। এর সুযোগ নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে ইলিশ বিক্রি করছেন। সঠিক কাগজপত্র না দেওয়ায় পাঁচ পাইকারকে ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এদিন। ভবিষ্যতে সমস্ত লেনদেনের নগদ মেমো নেওয়া এবং সংরক্ষণ করতে তাদের নির্দেশ দিয়েছে অধিদপ্তর।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, ভারতে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ইলিশের দাম কেজিতে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া, আসন্ন দুর্গাপূজা এবং ইলিশ মাছ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক ব্যবসায়ী ইলিশ মজুত করতে শুরু করেছেন, যার ফলে বাজারে এ মাছের দাম আরও বেড়েছে।
যাত্রাবাড়ী আড়তে মনপুরা, ভোলা, মহিপাল, ফেনী, চাঁদপুর, পাথরঘাটা ইত্যাদি এলাকা থেকে ইলিশ এনে বিক্রি করেন দুই শতাধিক ব্যবসায়ী।