সাভারের আশুলিয়ায় টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এতে দুটি মহাসড়কের প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন দিন ধরে একই স্থানে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য পণবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানবাহন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও পথচারীরা।
গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে অবরোধ করে শ্রমিকরা। এরপর আজ বুধবার (২ অক্টোবর) সকালেও শ্রমিকরা সেখানে অবস্থান করছেন স্থানীয় বার্ডস গ্রুপ নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
জানা গেছে, গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) লে-অফ ঘোষণা করা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের সার্ভিস বেনেফিট ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্ধারিত দিন ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো ধরনের পাওনাদি পরিশোধ না করে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
এমনকি তিন মাস সময় চেয়ে কারখানার গেটে একটি নোটিশ দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরদিন সকালে শ্রমিকরা বকেয়া পাওয়ার আশায় কারখানায় গেলে আরো তিন মাস সময় চাওয়ার বিষয়টি দেখতে পায় শ্রমিকরা। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বুড়িরবাজার রোড এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। অবরোধের টানা ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও কোনো ধরনের আশ্বাস না পাওয়ায় প্রত্যাহার করেনি শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্ডস গ্রুপের এক শ্রমিক বলেন, আমাদের চুক্তির দিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিশ্বাসযোগ্য লোকজন ছিলেন। কিন্তু সেই চুক্তিও ভঙ্গ করেছে মালিকপক্ষ। আমাদের অনেক শ্রমিক চাকরি না পেয়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। তারা বকেয়া পাওনার জন্য গ্রাম থেকে এসেছেন। এখন মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না।
আমাদের সবাই হতাশ করেছে। পাওনা না পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে গুরুত্বপূর্ণ নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কটিতে যানচলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সড়কটিতে চলাচলকারী পথচারী ও যাত্রীরা। দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন আটকে আছে মহাসড়কটির প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। এর প্রভাবে আশপাশের ঢাকা-আরিচা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড দুটি মহাসড়কেও যানজট ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিশমাইল থেকে নবীনগর পর্যন্তও তিন কিলোমিটার এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাকচালক রহমত আলী বলেন, মালামাল নিয়ে দুই দিন ধরে যানজটে পলাশবাড়ী এলাকায় আটকে আছি। গাড়ির চাকা কোনোভাবেই নড়ছে না। শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাখছে তিন দিন ধরে। এখন এভাবে কতক্ষণ সড়কে বসে থাকা যায়? দুই দিন ধরে ভালোভাবে খাওয়া, গোসল আর ঘুম নাই। আামদের দুর্দশা আর দুর্ভোগের কথা আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ভাবা উচিত। এত সময় ধরে শ্রমিকরা সড়ক বন্ধ করে রাখলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ কেন নিচ্ছে না, সেটাও বুঝতেছি না। পুলিশের কাউকেই দুই দিনে এখানে আসতে দেখিনি।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করেনি শ্রমিকরা। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসবেন।