নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২১ সালে বিশ্বের ১৪তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে উঠে এসেছে, দেশের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে আইনি ও শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, পাসপোর্ট অফিস, এবং সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিচারিক সেবা, ভূমি, স্বাস্থ্য এবং স্থানীয় সরকার খাতেও দুর্নীতির হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
একটি শ্বেতপত্র প্রতিবেদন, যেটি গত ১৫ বছর ধরে চলমান দুর্নীতি ও অর্থপাচারের ঘটনাগুলো তুলে ধরে, এই সময়ে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে পাচার হওয়ার তথ্য প্রদান করেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংকিং, অবকাঠামো, জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। এর পাশাপাশি, মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের দুর্নীতি পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হতে পারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংস্কার। শ্বেতপত্রের কমিটি, যেটি ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল, প্রতিবেদনটিতে দুদকের কার্যক্রমে ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করেছে।
কমিটি সর্বমোট ৪৭টি সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব। এতে দুদক স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। এর পাশাপাশি, কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব দূর করতে হবে, এবং দুদকের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদককে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীন করে তোলা গেলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সফল পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সংস্কারগুলি যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে আগামী দিনে দেশের দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
এদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২১ সালের জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৭০.৯% পরিবার দুর্নীতির শিকার হয়েছে। সাধারণ জনগণ জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সেবা পাওয়া সম্ভব না হওয়া পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। এর ফলে, ঘুষের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৮৩০ কোটি টাকা, যা দেশের মোট জিডিপির ০.৪% এর সমান।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।
এম কে মারূফ/