বিশ্বের অনেক শহরের মতো ঢাকাও আজ বায়ুদূষণের চরম সমস্যার মধ্যে রয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন কারণে পৃথিবীজুড়ে বায়ুদূষণ বাড়ছে। বিশেষ করে, শহরের বায়ু মানের উন্নতির বদলে দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। সম্প্রতি ১৬ ফেব্রুয়ারি, রোববার, আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দিল্লি শহর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে শীর্ষে রয়েছে। সকাল ১০টার দিকে এই তথ্য প্রকাশিত হলে, সবাই চমকে ওঠে। দিল্লির বায়ু মানের স্কোর ছিল ৪০০, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং নাগরিকদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
আইকিউএয়ার বায়ুর মানের লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক প্রকাশ করে, যা বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বায়ু পরিস্থিতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে এবং তাদের সতর্ক থাকতে বলে। এটি শুধুমাত্র তথ্য দেয় না, বরং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সম্পর্কেও সতর্ক করে।
ঢাকা শহরের বায়ু মান বর্তমানে ১৮১ স্কোর নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এর মানে হলো, ঢাকার বায়ু মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে এবং নাগরিকদের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং, ঢাকায় বসবাসরত জনগণের জন্য সতর্ক থাকার সময় এসেছে। বায়ু দূষণের কারণে শিশু, প্রবীণ ব্যক্তি এবং যেসব মানুষ শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের বিশেষভাবে সাবধানে থাকতে হবে।
একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) স্কোরের ভিত্তিতে বায়ু মানকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়:
১. ০ থেকে ৫০ – ভালো বায়ু, যা স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য উপযোগী।
২. ৫১ থেকে ১০০ – মাঝারি, যদিও সাধারণ জনগণের জন্য কোনো বিপদ নেই, কিন্তু সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
৩. ১০১ থেকে ১৫০ – অস্বাস্থ্যকর, বিশেষ করে শিশু, প্রবীণ এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যাযুক্ত মানুষদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
৪. ১৫১ থেকে ২০০ – অস্বাস্থ্যকর বায়ু, যা সাধারণ জনগণের জন্যও বিপজ্জনক এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
৫. ২০১ থেকে ৩০০ – খুব অস্বাস্থ্যকর, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে, বিশেষত শিশু ও প্রবীণদের জন্য।
৬. ৩০১ থেকে ৪০০ – ঝুঁকিপূর্ণ, যা নগরবাসীদের জন্য অত্যন্ত গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে, এবং এই অবস্থায় বাইরে থাকা উচিত নয়।
ঢাকার মত বড় শহরে যখন একিউআই স্কোর ১৮১-এ পৌঁছায়, তখন এটি শুধু বায়ু মানের অবনতি নয়, বরং নগরবাসীর জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত বায়ু দূষণজনিত রোগগুলো যেমন শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এলার্জি এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।
এছাড়া, বায়ুদূষণের মূল কারণগুলোও আমাদের সচেতনতার অভাবে বেড়ে চলেছে। যানবাহন, কলকারখানা, ধূলাবালি এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। বস্তুকণা (পিএম১০ এবং পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (এনও২), সালফার ডাইঅক্সাইড (এসও২), কার্বন মনোক্সাইড (সিও) এবং ওজোন (ও৩)—এই দূষণকারী উপাদানগুলো বায়ু মানের অবনতি ঘটায় এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বায়ুদূষণ কমানোর জন্য গাছপালা রোপণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর আইন প্রণয়ন, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।