চুরির অভিযোগে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার জেরে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া আহত হয়েছে আরো ২০ জন এর মধ্যে ৭ জন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ৪ জন কে আশংকাজন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও পৌর শহরে বেলা দুইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারী করেছে প্রশাসন ।অপরদিকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঘটনার প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘন্টা সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে ।
পুলিশ জানায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের নোয়াপাড়া এলাকায় মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীঘিনালায় সংঘর্ষ এবং এর জের ধরে রাতভর বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনায় ৩ নিহত ও ২০ জনের মত আহত হয়েছে ।
নিহতরা হলেন ধন রঞ্জন চাকমা (৫০),পিতা কান্দারা চাকমা,উদালবাগান,দিঘীনালা। তিনি গত বৃহষ্প্রতিবার দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গুলিবৃদ্ধ হয়ে মারা গেছে । অপর দু জন রুবেল ত্রিপুরা (১৯) পিতা-জামিনী মোহন চাকমা,বেলতলী পাড়া,খাগড়াছড়ি সদর ও জুরান চাকমা (২০) পিতা রূপেশ চাকমা,জামতলী,দিঘীনালা জেলা সদরের নারানখাইয়া এলাকায় ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছে ।
খাগড়াছড়ি আধূনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা নিহতের লাশ হাসপাতালে আছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান,এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয় অপর দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায়।্এদিকে আজ সকালে জেলা প্রশাসক মো: শহীদুজ্জামান,দীঘিনালা সেনা জোনের অধিনায়ক লেঃকর্ণেল ওমর ও পুলিশ সুপার আরিফিন জুয়েল দীঘিনালার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন ্ এ সময় তারা স্থানীয় লোক জনের সাথে কথা বলেন ও ঘটনার তদন্তে তদন্ত কমিটি গঠন সহ দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচারের আশ^াস দেন । তিনি ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবার পরিজনদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেন ।
গতকাল বৃহষ্প্রতিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় (পাহাড়ী -বাঙ্গালী ) দুই পক্ষের সংঘর্ষের জের এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যার পর থেকে দীঘিনালা,পানছড়িসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তার অবরোধ করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর উপর চড়াও হয়। পানছড়িতে বিক্ষোভকারীরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
রাতে জেলা সদরের নারানখাইয়া ও স্বনির্ভর এলাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপে , মুহুর মুহু গুলির শব্দ শুনা যায়। কারা গুলি বর্ষন করেছে কেউ নিশ্চিত না করলেও এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গভীর রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দুই পাহাড়ী যুবক ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছে। এর মধ্যে জুরান চাকমা (২০) কে মৃত অবস্থায়, রুবেল ত্রিপুরা (৩৫) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
হাসপাতালে চিকিসাধীন আহত ও তাদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, জেলা সদরের নারাখাইয়া এলাকায় কয়েকজনকে আটক করলে তারা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী গুলি বর্ষন করলে তারা গুলিবিদ্ধ হন।
এদিকে খাগড়াছড়ি আধূনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা নিহতের লাশ হাসপাতালে আছে বলে নিশ্চিত করেছেন ।
বর্তমানে পুরো জেলার জনমনে আতংক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে । খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজিত পাহাড়ী লোকজন রাস্তায় গাছকেটে এবং চেঙ্গী নদীর জন্য নির্মিত বøক ফেলে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। ফলে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা সদর ,দীঘিনালা ও পানছড়িতে নিরাপত্তাবাহিনীকে টহল দিতে দেখা যাচ্ছে ।
এ ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষথেকে দিঘীনালা সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল ওমর জানান পুরো জেলার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রনে । রাস্তায় রাস্তায় সেনা টহল রয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিজের হাতে আইন তুলে না নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে ।তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের সহসাই আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান ।
খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি
এদিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সংঘাতের জেরে সহিংসতা ও নাশকতা রোধে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো.সহিদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন ,যে কোন ধরনের সহিংসতা রোধে এধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।’
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি বলে হয়,উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকবেলায় ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ সালের ১৪৪ ধারা মতে নিষেধেজ্ঞা আরোপ করলাম। শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।