প্রধান উপদেষ্টা শফিকুল আলম বলেছেন, দুবাইয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তবে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। তিনি জানান, ড. ইউনূস সেখানকার ৫ থেকে ৬ জন মন্ত্রীদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং আশাবাদী যে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য দুবাইয়ের শ্রমবাজার আবার খুলে যাবে। এই প্রসঙ্গে তিনি মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আরও বিস্তারিত বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, “দুবাইয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আমরা জানি। ড. ইউনূস এই বিষয়ে দুবাইয়ের পাঁচ থেকে ছয় জন মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং আমরা আশা করছি, শিগগিরই এই নিষেধাজ্ঞা উঠবে। তখন আবার বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেখানে কাজের জন্য যেতে পারবেন। সরকার ইতোমধ্যে এ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে।”

এছাড়া, শফিকুল আলম একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলেছে। তিনি বলেন, “এই অভিযোগ একটি বড় ধরনের অপরাধ, এবং এই রিপোর্টের পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের কাছে এটি একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।”

তিনি বলেন, “ইন্ডিয়া টুডে একটি জরিপ করেছে যেখানে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ মানুষ চান শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক। কিছু মানুষ চাইছেন তাকে অন্য দেশে পাঠানো হোক, আর মাত্র ১৬-১৭ শতাংশ মানুষ চান তাকে ভারতে রাখা হোক।”

এছাড়া, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, “আমরা বারবার বলেছি, এই বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত দেশের জনগণ নেবে। তবে, আমাদের একটাই কথা, যারা গণহত্যা, গুম-খুন এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী করবেন।”

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “এটা স্পষ্ট যে, দেশের জনগণ যে কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকারের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে, যদি তারা সঠিকভাবে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করে এবং সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে।”

সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম আরও বলেন, “সরকারের কাজ চলমান রয়েছে এবং আমরা নিশ্চিত যে, আওয়ামী লীগ যদি তার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবে দেশের জনগণ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।”

এ সময় সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ডিসিরা তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং সরকারের কাছে দ্রুত সমাধান চেয়ে বেশ কিছু সুপারিশ করেন। তারা জাতীয় নির্বাচনের সুষ্ঠু আয়োজন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

স্থানীয় নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে তিনি বলেন, “স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠু এবং সফলভাবে আয়োজন করা হলে, তা জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করবে। এটি প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করবে এবং জনগণের জন্য আরও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করবে।”

এছাড়া, সম্মেলনের শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা একযোগে ভবিষ্যতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

সংবাদ সম্মেলনের শেষে শফিকুল আলম আরও বলেন, “আগামীতে যে কোনো নির্বাচনী কার্যক্রমে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সকল প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং নির্বাচনী প্রচেষ্টা জনগণের কল্যাণের জন্য পরিচালিত হবে।”

এ প্রসঙ্গে সরকার আরও জানায়, তারা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে পূর্ণ সুষ্ঠুতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত।