গত এক মাস ধরে আলোচনা চলছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র প্রতিনিধিরা পদত্যাগ করবেন। ফেব্রুয়ারির শুরুতে এই গুঞ্জন আরও জোরালো হয়, এবং ক্রমে নিশ্চিত হয়ে ওঠে যে, নাহিদ ইসলাম ছাত্রদের নতুন দলের নেতৃত্ব দেবেন। এ কারণে, তিনি দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে বা পরে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি ২৩ ফেব্রুয়ারি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি নতুন ছাত্র রাজনৈতিক দলটির ঘোষণা আসতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত আসিফ মাহমুদ, সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম পদত্যাগ করছেন না। শোনা যাচ্ছে, নতুন দলের কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এই দুইজন কোনো পদ পাবেন না। তারা সরকারের অংশ হিসেবে থাকবেন এবং নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী জানিয়েছেন, ১৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। প্রাথমিকভাবে দলের নাম ও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে, আর ঈদের পর পূর্ণাঙ্গ কাঠামো প্রকাশ করা হবে। ইতোমধ্যে পাঁচ লাখ মানুষের মতামত সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।
নাহিদ ইসলামের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, তবে সদস্য সচিব পদের জন্য কয়েকটি নাম আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে আক্তার হোসেন, নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, সার্জিস আলম ও আলী আহসান জুনায়েদ অন্যতম। এছাড়া, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মনিরা শারমিন, মাহবুব আলম ও অনিক রায়ের মতো আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন। সম্ভাব্য তারিখ অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বা পরে দলের নাম ও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে।
নাহিদ ইসলাম ২৩ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে নতুন দলের স্টিয়ারিং কমিটির নেতৃত্বে আসবেন। কিছু সূত্র জানিয়েছে, পদত্যাগের পর মাহফুজ আলম তথ্য প্রযুক্তি ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হতে পারেন।
নতুন ছাত্র দলটি তিনটি দেশের জনপ্রিয় চারটি রাজনৈতিক দল—তুরস্কের একে পার্টি ও জাস্টিস পার্টি, পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ, এবং ভারতের আম আদমি পার্টির আদলে গঠিত হতে পারে। এসব দলের গঠন, ইতিহাস, আদর্শ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আমরা বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছি। আমরা সাধারণ মানুষের কাছে ফিরে যেতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “এই দল কোনো নির্দিষ্ট এলিট শ্রেণি, বংশ বা আদর্শের হবে না, বরং এটি দেশের সব মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে।”
নতুন ছাত্র দলটিকে স্বাগত জানানো হলেও, কিছু বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন যে দল গঠনের ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেতরে বিভাজন দেখা দিতে পারে। যদিও দেশের বেশিরভাগ তরুণ এই দলকে সমর্থন করছেন, তবু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি দলটি দীর্ঘমেয়াদে জনপ্রিয় হতে চায়, তাহলে বিজ্ঞ ও মধ্যবয়সী রাজনীতিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলাও জরুরি।