পালিয়েও বাঁচার পথ পাচ্ছেন না ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের এমপি মন্ত্রীরা। দিশেহারা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। যারা দেশ পালাতে পেরেছেন তারাও পড়েছেন মহাবিপদে। বাতিল হয়েছে পাসপোর্ট। এমনকি রাজনৈতিক আশ্রয়ের পথও বন্ধ। এই মহাবিপদ থেকে কে তাঁদের উদ্ধার করবে এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামীলীগের অনেক নেতা, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। গ্রেফতার অসংখ্য মন্ত্রী, সংসদ সদস্য। বাদ যায়নি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও।
যারা পালিয়ে গেছেন তাঁরা বেঁচে গেছেন এমনটা যদি ভেবে থাকেন তাহলে এটা হবে বিশাল ভুল। কারণ এরই মাঝে হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লাল পাসপোর্ট সহ ৫৮৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
ফলে বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে কেউ বাংলাদেশ ত্যাগ বা পালিয়ে গেছেন তাদের তৃতীয় কোন দেশ ভ্রমণ করতে পড়তে হবে মহা জটিলতায়। এমনকি বন্ধ হয়ে যাবে রাজনৈতিক আশ্রয়ের পথ
ধারণা করা হচ্ছে গত পাঁচ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামীলীগ এবং তার অংগসংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
দেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যমের তথ্য মতে এরই মাঝে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক বস্ত্র ও পাঠমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সদস্য বাহাউদ্দিন নাসিম, সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন।
এছাড়াও ছাত্রলীগের সাদ্দাম, ইনান, শয়নসহ ছাত্রলীগ যুবলীগের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
এছাড়াও বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব কুমার সরকারও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন বলে খবর বের হয়েছে।
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩ আগস্ট রাতে পরিবারসহ দেশ ছেড়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তাপস, সপরিবারে সিঙ্গাপুরে চলে যান মোস্তফা কামাল, দেশ ত্যাগ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ, আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। এরই মাঝে শামীম ওসমানকে ভারতের মাজারে দেখা গেছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সাবেক মন্ত্রী স ম রেজাউল করিম সহ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন নেতার দেশ ছাড়ার গুঞ্জন রয়েছে।
গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে সাবেক এক মন্ত্রীর কাছ থেকে জানা গেছে ওবায়দুল কাদের এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। এরই মাঝে বাতিল করা হয়েছে হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী এমপিদের লাল পাসপোর্ট
এমনকি ১৪দলীয় নেতাদের অনেকের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এসব বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে কেউ যেমন বাংলাদেশ ত্যাগ করতে পারবেন না অন্যদিকে যারা এর মাঝেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন তারা তৃতীয় কোন দেশে ভ্রমণ করতে ঝামেলায় পড়তে হবে। এমনকি নির্বিঘ্নে চলাচলও করতে পারবেন না
আবার বৈধ পাসপোর্ট না থাকায় অন্য দেশের রাজনৈতিক আশ্রয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে
সূত্র থেকে জানা গেছে শেখ হাসিনারও ভারতের বাইরে অন্য কোন দেশে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ গ্রেফতার হচ্ছেন এরই মাঝে যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মাঝে অন্যতম হচ্ছে সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক মন্ত্রী মাহবুব আলী। এছাড়াও সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলের শাহরিয়ার কবির।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান সালমান এফ রহমান ও শেখ হাসিনার সাবেক সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী
এছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডক্টর দীপু মনি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ও রাশেদ খান মেনন গ্রেপ্তার হয়েছেন
সাবেক সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের যেমন অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এদের মাঝে সাবেক দুই আইজিপি এবং শহিদুল হক সহ বেশ কয়েকজন পুলিশের কর্মকর্তাকে ও গ্রেফতার করা হয়েছে
এছাড়া আলোচিত সেনা কর্মকর্তা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল হাসানকে।