পুলিশ স্টেশনে নারীর ওপর যৌন নির্যাতন, ক্ষোভ বাড়ছে ভারতে

রিপোর্টার :
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৮৭ সাংবাদটি পড়া হয়েছে

বিজেপিশাসিত ওড়িশা রাজ্যের এক থানার ভিতরেই এক সেনা অফিসার ও তার বাগদত্তাকে মারধর ও চরম যৌন হেনস্তার ঘটনা সামনে আসতেই শিউরে উঠেছে ভারতবাসী। গত শুক্রবার ওই নির্যাতিতার বক্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, থানার ভিতরেই অন্তর্বাস খুলে তার বুকে বার বার লাথি মারা হয়, যৌনাঙ্গ দেখান থানার আইসি। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ-সহ ৫ জন পুলিশ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভুবনেশ্বরের ভরতপুর থানায় সেনা অফিসার এবং তার বাগদত্তাকে মারধর ও যৌন নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। বৃহস্পতিবার ওড়িশা হাই কোর্টের নির্দেশে নির্যাতিতা জামিন পেয়েছেন। জামিন পাওয়ার পরেই থানার লকআপের ভেতরে কীভাবে তাকে অত্যাচার করা হয়েছিল সেই কথা বর্ণনা করেন নির্যাতিতা। পেশায় আইনজীবী ওই মহিলা একটি রেস্তোরাঁ চালান। একজন মহিলা পুলিশ অফিসারের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। এরপরেই তাদের গ্রপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

নির্যাতিতার অভিযোগ, ‘ইন্সপেক্টর ইনচার্জ বর্বরতার সব সীমা অতিক্রম করেছেন। তিনি আমাকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন।’ নির্যাতিতার অভিযোগ, নিজেদের বাঁচাতে পুলিশ তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ তার হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে তাকে একটি ঘরে ফেলে দেয়। সেখানে একজন পুরুষ অফিসার তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘একজন পুরুষ পুলিশ অফিসার এসে আমার অন্তর্বাস খুলে বারবার আমার বুকে লাথি মারতে থাকেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরে সকাল ৬টা নাগাদ ইন্সপেক্টর ইনচার্জ পৌঁছন। তিনিও চরম দুর্ব্যবহার করেন।’ নির্যাতিতা বলছেন, ‘ইন্সপেক্টর ইনচার্জ আমাকে ধাক্কা দেন, হুমকি দেন এবং অশ্লীল ইঙ্গিত করেন। তিনি নিজের প্যান্টের বোতাম খুলে যৌনাঙ্গ দেখিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন। আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাওয়ার কথা জানান। তিনি আমার শ্লীলতাহানিও করেছেন।’

সেনা অফিসার জানান, তাকে ভোর ৩টে থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত লক আপে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়। তার অভিযোগ, সকাল ৬টা নাগাদ থানায় পৌঁছন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ। তিনি যখন পুলিশ অফিসারের কাছে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চান তখন তাকেও হেনস্থা করা হয়। তার অভিযোগ, পুলিশ অফিসার বাগদত্তাকে হয়রানি ও শ্লীলতাহানি করেছেন। তিনি ৩০ মিনিট ধরে বাগদত্তার চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন।

যদিও পুলিশ কর্মীরা নির্যাতিতার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এই অভিযোগ ওঠার পরেই ওড়িশা পুলিশের অপরাধ শাখা ঘটনার তদন্ত করছে। এই ঘটনার পর বিজেপি শাসিত ওড়িশায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যেখানে থানার মধ্যেই কোনও মহিলাকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়, তবে সারা রাজ্যে কে তাদের রক্ষা করবে? এদিন, দিল্লিতে কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘ওড়িশায় কী ঘটছে এবং তাও একজন মহিলার সঙ্গে যিনি নিজে একজন আইনজীবী এবং একজন সেনা সদস্যের বাগদত্তা। থানার ভিতরেই একজন মহিলারকে এমন অসম্মান। এই ঘটনাগুলি কেন বিজেপি শাসিত রাজ্যেই ঘটে? কেন বিজেপি শাসিত রাজ্যে মহিলারা নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার শিকার হয়?’

তারপর থেকে, ভারতে অনেকেই কথিত পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় গিয়েছিলেন। অনেক প্রাক্তন এবং চাকরিরত সেনা কর্মকর্তারা মহিলাটির ভাইরাল ভিডিও শেয়ার করেছেন এবং তার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা ব্রিগেডিয়ার হওয়ার কারণে তার লড়াইয়ে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী ওডিশার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে একটি চিঠিও লিখেছে যে, ‘একজন কর্মরত অফিসারকে প্রায় ১৪ ঘন্টা ধরে কোনো অভিযোগ ছাড়াই হেফাজতে রাখা হয়েছিল’ এবং ‘গুরুতর ঘটনার কারণে… তার মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়েছিল’। ‘তার বাগদত্তার সম্মান এবং মর্যাদা, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ারের মেয়েও হতে পারেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষের দ্বারা চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছিল,’ চিঠিতে যোগ করা হয়েছে।

রাজ্য সরকার বলেছে যে তারা ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সম্মান করে’ এবং ‘মহিলাদের মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন’। এটি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি চিত্ত রঞ্জন দাশকে তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য মনোনীত করেছে। ক্রাইম ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা নরেন্দ্র বেহেরা মিডিয়াকে জানিয়েছেন, মহিলার অভিযোগগুলি তদন্ত করা হচ্ছে এবং তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। দম্পতিকে হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত সাতজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং পরে তারা জামিনে মুক্তি পায়। সূত্র: বিবিসি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যরা যা পছন্দ করছে
© All rights reserved © 2024 bdnews24us.com