সাধারণ এক সেবাগ্রহীতা হিসেবে হাতের প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে কালবেলার এই প্রতিবেদক নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে গিয়েছিলেন চিকিৎসাসেবা নিতে। ২০৭নং কক্ষে কর্মরত ডাক্তারের সঙ্গে আরেক নারী জিজ্ঞাসা করলেন কী হয়েছে?
হাতের ব্যথা কথাটি শুনেই ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখে দিলেন ৪টি ওষুধ। এর মধ্যে দুটি ওষুধে টিক দিয়ে সেই নারীর কাছে এগিয়ে দিলেন। ওই নারী ছোট্ট একটা স্লিপে লিখে দিলেন Diclofenac ও Esotid। আর অন্য দুটি ওষুধ বাইরে থেকে কেনার পরামর্শ দিলেন।
এরপর স্লিপ এগিয়ে দিলে হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে Diclofenac ওষুধ দিয়ে জানালেন গ্যাসের ওষুধ আজ সাপ্লাই নেই। এদিকে, ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে থাকা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের শুরু হলো প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলার প্রতিযোগিতা।
এই প্রতিবেদকের মতো আরেক সেবাগ্রহীতা জিয়ারুল। তিনি অন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে বললেন, আমাকে ৪টি ওষুধ লিখে দিয়েছেন। কিন্তু স্লিপে দিয়েছে একটি। অন্য ওষুধ না কি কিনতে হবে। এই হলো আমাদের হাসপাতালের অবস্থা।
শুধু তিনি নন, এ রকম শত শত নারী-পুরুষ ওষুধ নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাদের অনেকেই জানেন না, ব্যবস্থাপত্রে যে কয়টি ওষুধ লেখা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কয়টি ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হবে। তাই অনেকে ওষুধ না পেয়ে চলে যাচ্ছেন কষ্ট নিয়ে।
এদিকে, লাইনে যখন শত শত নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে, ঠিক সেই মুহূর্তে হাসপাতালে কর্মরত দুই-তিনজনকে দুই হাতের মুঠোয় এবং পলিথিনে করে ওষুধ নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ যেন অনিয়মের ওপর অনিয়ম।
অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে যে ওষুধ সাপ্লাই থাকবে না, সেই ওষুধ লিখবে কেন? আর সাধারণ রোগের ওষুধ এই হাসপাতালে সাপ্লাই থাকবে না কেন? তাহলে আমাদের গরিবদের জন্য এই আধুনিক হাসপাতাল থেকে লাভ কী? তাই চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের দাবি, এই হাসপাতাল হোক অসহায়দের জন্য ভালো চিকিৎসাসেবার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য। পাওয়া যাবে সব ওষুধ।
জানা যায়, ভালো চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিকে প্রথমে ১০০ শয্যা, এরপর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। এখানে নামমাত্র সরকারি ফি দিয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের ভালো চিকিৎসাসেবা ও হাসপাতালের ওষুধ নিতে চায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সেজন্য দিন দিন বাড়ছে রোগীর চাপ। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সী রোগী এখানে সেবা নিতে আসেন। ফলে প্রতিদিন আউটডোরে অন্তত দেড় হাজার মানুষ চিকিৎসা নেয়। এখানে ভালো চিকিৎসা নেওয়ার জন্য গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন ৩০০ জন।
হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ার পর জেলাবাসীর স্বপ্ন ছিল চিকিৎসাসেবার মান বাড়ার পাশাপাশি সেবা পেয়ে উপকৃত হবে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখনো চলছে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায়। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা ও দালাল সিন্ডিকেটের কারণে সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে হাসপাতালের। অন্যদিকে সংশ্লিষ্টদের অজুহাত ১০০ শয্যার লজিস্টিক দিয়েই চলছে ২৫০ শয্যার কার্যক্রম। তাই এত রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক। যে কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে হাসপাতালের সার্বিক বিষয় জানতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
এদিকে, হাসপাতালে সরবরাহকৃত ওষুধের তালিকা নিজ থেকে এই প্রতিবেদককে একাধিকবার দিতে চাইলেও এখন পর্যন্ত দেননি হাসপাতাল আউটডোরের ইনচার্জ হায়াত। জানতে চাইলে ব্যস্ততার কারণে মনে নেই বলে জানান তিনি।