ফের বাড়লো ভোজ্যতেল চিনি মুরগি আলু ও সবজির দাম

রিপোর্টার :
  • আপডেট সময় : শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৭৩৬ সাংবাদটি পড়া হয়েছে

অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে ফের বাড়ছে সবধরনের নিত্যপণ্যের দাম। ভোজ্যতেল, আলু, ডিম, মুরগি, চিনি ও সবজির মতো নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে জাত ও মানভেদে ৫৬-৬০ টাকায়। ওই হিসাবে প্রতি ডজন ডিম কিনতে ১৭০-১৮০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে একজন ভোক্তাকে। একইভাবে দাম বেড়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ না বাড়লে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, কাপ্তান বাজার, যাত্রাবাড়ী বাজার, মুগদা বড় বাজার, গোড়ান বাজার ও মালিবাগ রেলগেট বাজার থেকে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, নিত্যপণ্যের বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

জানা গেছে, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও দেশের বিভিন্ন বাজারে চাঁদাবাজ গ্রুপের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম আবার বেড়ে গেছে। এতে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। অথচ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় মাসখানেক দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু এখন আবার অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অপতৎরপতা ও বাজার-পরিবহন কেন্দ্রিক চাঁদাবাজ গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠায় ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তরের কয়েকটি বাজার মনিটরিং টিমের তদারকির বাইরে নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দৃশ্যত তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজরা ফের চাঁদাবাজি শুরু করেছে সড়ক-মহাসড়ক ও বাজারে। পণ্যবাহী পরিবহনগুলোতে হচ্ছে চাঁদাবাজি। এর প্রভাবেও নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। উৎপাদন খরচ অনেক বেশি এমন অজুহাত দেখিয়ে সিন্ডিকেটগুলো তাদের খেয়ালখুশি মতো দাম বাড়ায়। তিনি আরও বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাজারে অভিযানের সময় দাম কমে যায় ও পরে আবার বাড়ে। এ ছাড়া ভোক্তা অধিদপ্তরের

বৈঠকে সম্প্রতি তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি হারুন অর রশীদ খামারি থেকে শুরু করে পাইকারি গুদাম ও খুচরা বিক্রেতাদের ওপর সরকারের নজরদারির পরামর্শ দেন। ওই সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড ল্যাবরেটরি) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ল্যাপস মনিটরিংয়ের সুযোগ নিচ্ছে।

টিসিবির তথ্যমতে, শুক্রবার ফের দুই লিটারের সয়াবিন তেলের ক্যানে ৫ টাকা দাম বেড়ে ৩৩০-৩৩৫ টাকা, পামঅয়েল খোলা ২ টাকা বেড়ে প্রতি লিটার ১৩৭-১৪২ টাকা, প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে আলু ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ১৭৫-১৯০, চিনি খোলা ১২৮-১৩৫ ও ডিম প্রতি হালি ৫৫-৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।

তবে সংস্থাটির তথ্যমতে, দাম কমে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চাল, ডাল ও আটার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বেশিরভাগ সবজির দাম আবার বেড়ে গেছে। এ ছাড়া চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছের রাজা ইলিশ। গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গোড়ান বাজারে মুদিপণ্যের ব্যবসায়ী আহসান হাবিব টিটু জনকণ্ঠকে বলেন, সবধরনের ভোজ্যতেল ও চিনি এখন বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। চাল, ডাল ও আটার দাম আগের দামে স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি বলেন, এসব পণ্যের দাম আগে বেড়ে গিয়েছে। এখন কমার কথা থাকলেও কমছে না।

এদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গত ১৫ সেপ্টেম্বর এক আদেশে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দাম নির্ধারণ করে দেয়। সে হিসাবে ডিমের হালি খুচরা পর্যায়ে ৪৭ টাকা ৪৮ পয়সায় বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ এখন প্রতি হালি কিনতে হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায়। সে হিসাবে হালিতে ১১ থেকে ১২ টাকার বেশি গুনতে হচ্ছে গ্রাহককে। অন্যদিকে বাজারে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে এক সপ্তাহ আগে। ব্রয়লার মুরগি এখন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া সোনালি মুরগির দামও ১০ টাকা বেড়ে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা হয়েছে। বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরে চড়া রয়েছে আলুর দাম। বর্তমানে প্রতিকেজি আলু ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শর্ত শিথিল ও শুল্ক কমানোর পর দেশের পেঁয়াজের দাম অল্প কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের সপ্তাহের তুলনায় বেশকিছু সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহ কমেছে।

অনেক সবজি খেতে নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া এখন গ্রীষ্মের মৌসুমের সবজিগুলো সরবরাহ শেষদিকে, আর শীত মৌসুমের আগাম সবজির সরবরাহ কম। দুই মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এখন দাম বাড়ছে বলেও মনে করা হয়। ফকিরাপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা আসলাম হোসেন বলেন, গ্রীষ্মের মৌসুম শেষে, শীতের মৌসুম শুরুর আগের এই সময়টি প্রতিবছর সবজির দাম একটু বেশিই থাকে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে সবজির সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতে এখন সবজির দাম বেশি। পেঁপে ছাড়া বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। ৬০ থেকে ৭০ টাকায় শুধু পটোল মিলছে। ঢেঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, কচুমুখী বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। বরবটি, কাঁকরোল, করলা, বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া শীতের আগাম সবজি শিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকা দরে। প্রতি পিস ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যরা যা পছন্দ করছে
© All rights reserved © 2024 bdnews24us.com