সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার রিকি পন্টিং বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। পন্টিং দাবি করেছিলেন যে, বাংলাদেশে কোনো কোয়ালিটি ক্রিকেট প্লেয়ার নেই এবং তাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে শেন ওয়াটসন, যিনি অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী দলের অংশ ছিলেন, পন্টিংয়ের বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

শেন ওয়াটসন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আপনি যদি মনে করেন, বাংলাদেশে কোনো কোয়ালিটি ক্রিকেটার নেই, তাহলে আপনি সেই দেশের ক্রিকেট সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাননি। মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা—এই বোলাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আপনি কি তাদের বোলিং শক্তি নিয়ে কোনো ধারণা দিয়েছেন?”

তিনি আরও যোগ করেন, “মিডল অর্ডারে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তাওহিদ হৃদয়—এই খেলোয়াড়দের নিয়ে কি আপনি কিছু বলেননি? তাদের ব্যাটিং, ম্যাচে বড় ইনিংস খেলার দক্ষতা, সবই চোখে পড়ার মতো।”

শেন ওয়াটসন বাংলাদেশ দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের ক্ষমতার কথা বলেও পন্টিংয়ের বক্তব্যকে ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, “সৌম্য সরকার, তানজিদ তামিম, নাজমুল হাসান শান্ত—এই ওপেনাররা কি কোনো কোয়ালিটি ক্রিকেটার নয়? বিপিএলে তাদের খেলা দেখেছেন তো? সৌম্য সরকারের ছক্কা, তানজিদ তামিমের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং—এগুলো যদি কোয়ালিটি না হয়, তাহলে কী?”

ওয়াটসন আরও বলেন, “বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কেবল কোয়ালিটি বলেই নয়, তারা প্রতিটি ম্যাচে ধারাবাহিকতা এবং সাফল্য অর্জন করেছে। আপনি যদি আফগানিস্তানকে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করান, তাহলে বুঝতে হবে তারা কীভাবে আন্তর্জাতিক লিগে সাফল্য পাচ্ছে। তবে, বাংলাদেশও সেই পথেই যাচ্ছে। শুধু তাদের কিছু সুযোগ দরকার।”

তিনি আফগানিস্তানের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “রশিদ খান, নূর আহমেদ, রহমান গুরবাজ—এরা সবাই আন্তর্জাতিক লিগে খেলতে পাচ্ছে এবং তাদের প্রতিভা উপরের স্তরে যাচ্ছেই। বিপিএলে এখন আর তাদের দেখা যায় না, কারণ তারা বিশ্বব্যাপী খেলছেন।”

শেন ওয়াটসন আরও বলেন, “বাংলাদেশের ক্রিকেটের পক্ষে যখন কেউ এগিয়ে আসে, তখন তাদের ওপর অবজ্ঞা করা উচিত নয়। বাংলাদেশও তাদের কোয়ালিটি দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত। আপনি যদি শুধু সুযোগ না দেন, তাহলে তাদের কোয়ালিটি বের হওয়ার কোনো উপায় থাকবে না।”

এদিকে, ওয়াটসন বলেন, “বাংলাদেশের ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং তাদের প্রতি এই ধরনের অবজ্ঞা শুধু খারাপ প্রশিক্ষণ নয়, বরং এক ধরনের অবমূল্যায়ন।”

এমনকি, তিনি বাংলাদেশ দলের প্রতি তার সমর্থন জানিয়ে বলেন, “এটা সত্য যে বাংলাদেশ বহু বছর ধরেই নিজেদের প্রতিভা এবং ক্ষমতা প্রমাণ করছে। খেলোয়াড়রা যদি সুযোগ পায়, তারা অবশ্যই আরও অনেক কিছু অর্জন করতে সক্ষম।”

শেন ওয়াটসন তার প্রতিক্রিয়ায় পন্টিংয়ের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের শক্তি এবং কোয়ালিটির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাফল্যের জন্য সঠিক সুযোগ দরকার এবং যদি সেই সুযোগ পায়, তারা যেকোনো পরিস্থিতি জয় করতে পারে।”

এদিকে, ওয়াটসন তার সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন এবং তাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোয়ালিটি নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে, তা পুরোপুরি ভুল। প্রতিটি দেশের ক্রিকেট দলই নিজের জায়গায় শক্তিশালী এবং বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা প্রমাণ করতে প্রস্তুত।”

এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক নতুন উজ্জীবন এবং তাদের জন্য একটি বড় উৎসাহ, যাতে তারা আরও ভালো খেলতে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে প্রস্তুত থাকে।