সরকারি-বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ আরও বেড়ে প্রায় ১০৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলারে ঠেকেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। এর আগে প্রথমবারের মতো গত ডিসেম্বরে বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। ওই সময় ঋণ ছিল ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। মার্চে আবার কমে ৯৯ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল।
জুন শেষে বিদেশি ঋণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভের পাঁচ গুণেরও বেশি। বর্তমানে দেশের রিজার্ভ রয়েছে ১৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। গত সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১৩৭ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ এ পর্যায়ে রয়েছে। মূলত বৈশ্বিক পরিস্থিতি, অভ্যন্তরীণ নীতি দুর্বলতা, বিগত সরকারের সময়ে বিপুল অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন কারণে রিজার্ভ এ পর্যায়ে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারি খাতে রয়েছে ৮৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ৭৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। আর বেসরকারি খাতে ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ছয় মাস আগে ছিল ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৬০১ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত ৯ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত কয়েক বছরে বড় কিছু অবকাঠামো প্রকল্পের কারণে বিদেশি ঋণ দ্রুত বেড়েছে।
জনশুমারি ও গৃহগণনা শুমারির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। সেই হিসাবে গত জুন শেষে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬১১ ডলার (প্রায় ৭৩ হাজার টাকা)। ৯ বছর আগে যা ছিল ২৫৭ ডলার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পর্যালোচনায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে।
সার্বিকভাবে ঋণের পরিমাণ জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ। তবে রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় ও বিদেশি বিনিয়োগ, অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে রাজস্ব বাড়াতে না পারলে বিদেশি ঋণের দায় পরিশোধ অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করতে পারে। অর্থনীতিবিদরা সব সময় সহজ শর্তের এবং কম সুদের বিদেশি ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় এখন বেশি সুদের বাণিজ্যিক ঋণও নিচ্ছে।