পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মাদ্রাসার নাম করে ভুয়া আবেদন দিয়ে চাল আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় জড়িত প্রতারক চক্রের সদস্য মো. ইলিয়াছ শরীফ (৩২) নামে একজনকে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আটক করে মিরসরাই থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। সে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর গ্রামের মৃত মো. ইউসুফ শরীফের ছেলে।
মিরসরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিসের অফিস সহকারী সোহাগ আহমেদ বলেন, ‘পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের মাধ্যমে মিরসরাই উপজেলার ১৫টি হেফজখানা ও এতিমখানা মাদ্রাসা জন্য ১৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ওই ১৫টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিল। পরর্বতীতে চাল বরাদ্দ আসলে আমি আবেদনে দেওয়া নাম্বারে কল দিই। সে অনুযায়ী মাদ্রাসার প্রতিনিধিরা ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে চাল উত্তোলন করে নিয়ে যান।’
সোহাগ আহমেদ বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মু’মিন (রাঃ) মহিলা এতিমখানার পরিচালক মাওলানা আনোয়ার হোসেন অফিসে এসে অভিযোগ করেন- তার মাদ্রাসার নামে বরাদ্দকৃত ১ টন চাল তিনি পাননি। এটি শোনার পর চাল উত্তোলনকারী মো. ইলিয়াছ শরীফকে কল দিয়ে অফিসে আসতে বলি। তিনি সন্ধ্যায় অফিসে আসলে ব্যাপক জিজ্ঞেসাবাদ করার পর প্রতারণার মাধ্যমে চাল উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করার বিষয়টি স্বীকার করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘চাল বরাদ্দ হওয়া আরো কয়েকটি মাদ্রাসার নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে সেগুলোও বন্ধ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রতারক চক্রটি আরো কয়েকটি মাদ্রাসার নামে বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলন করে ফেলেছে। সবগুলো আবেদন নতুন করে তদন্ত করা হবে। প্রতারক ইলিয়াছ শরীফকে মিরসরাই থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মু’মিন (রাঃ) মহিলা এতিমখানার পরিচালক মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমাদের মাদ্রাসার নামে ১ টন চাল বরাদ্দ হওয়ার খবর শুনে আমি মঙ্গলবার উপজেলা পিআইও অফিসে যোগাযোগ করি। সেখানে গিয়ে দেখি গত ২১ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর মো. ইলিয়াছ শরীফ নামে একজন মাদ্রাসার পরিচালক সেজে চার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছিলেন। আবেদনপত্রে ব্যবহৃত প্যাডটি আমাদের মাদ্রাসার নয়। তাছাড়া আবেদন সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ১ টন চাল বরাদ্দ দেন। পরবর্তীতে ইলিয়াছ শরীফ নিজে উক্ত চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এঘটনায় যারা জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযুক্ত মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেন, ‘আমার বড় বোন আনজুমান আক্তার এর পরামর্শে আমি পিআইও অফিসে গিয়ে স্বাক্ষর করি এবং করেরহাট খাদ্য গুদাম থেকে ১ টন চাল নিয়ে আসি। এজন্য আমাকে দুই হাজার টাকা দিয়েছিল আমার বোন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে আমি করেরহাট খাদ্যগুদাম থেকে ১ মেট্রিকটন চাল প্রায় ৩০ বস্তা পিকআপে করে করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর গ্রামে আমার বোনের বাড়িতে নিয়ে যাই। সেখান থেকে আমি ৩ বস্তুা, আমার ছোট বোনকে ২ বস্তা, খালাতো বোনকে ১ বস্তা চাল দিই। বাকি চালের বস্তাগুলো আমার বোন ও খায়রুল হুজুর মিলে বিক্রি করে দিয়েছেন।’
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) মিরসরাই উপজেলা সভাপতি ও ছকিনা আয়েশা মহিলা মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা জমির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতারক চক্রটি সু-কৌশলে আমাদের মাদ্রাসার নামেও ভুয়া আবেদন করে বরাদ্দকৃত ১ টন চাল আত্মসাৎ করে ফেলেছে। বিষয়টি জানার পর আমি উপজেলা পিআইও অফিসে যোগাযোগ করেছি। এঘটনায় জড়িত ইলিয়াছ শরীফ নামে এক প্রতারককে আটক করে মিরসরাই থানায় সোপর্দ করা হলেও তার নামে মামলা না করে চাল আত্মসাতের বিষয়টিকে রফাদফা করার চেষ্টা চলছে বলে শুনেছি। উপজেলার ১৫টি মাদ্রাসার মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কয়টি মাদ্রাসা চাল বরাদ্দ পেয়েছে তা উদঘাটনের পাশাপাশি প্রতারক চক্রটিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি।’
মিরসরাই থানার ওসি আবদুল কাদের বলেন, ‘প্রতারণা করে চাল আত্মসাতের সাথে জড়িত ইলিয়াছ শরীফ নামে একজনকে থানায় আনা হয়েছে। এঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কর্তৃক বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলন করে আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত ইলিয়াছ শরীফ নামে একজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। সে প্রতারণা করে চাল আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেছে। এঘটনায় পিআইও অফিসের অফিস সহকারীকে বাদী হয়ে নিয়মিত মামলা করার জন্য বলা হয়েছে৷’ এছাড়া প্রতারণা করে চাল আত্মসাতের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।