শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে। সরকারের নানা নীতি, কর্মকাণ্ড এবং জনগণের উপর দমন-পীড়নের ফলে বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক সমাজের নজর কেন্দ্রীভূত করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তর এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, দুটি বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার সংস্থা, গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা উদাহরণ তুলে ধরেছে এবং তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেছে।
এমএনএসটি ইন্টারন্যাশনাল তাদের প্রতিবেদনটিতে যে তথ্য উপস্থাপন করেছে, তা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সরকারের আচরণের ভয়াবহতা প্রকাশ করে। বিশেষভাবে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, পুলিশী দমন-পীড়ন, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের উপর হামলা, এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলির দমন জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এইসব সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরও জানিয়েছে, “বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার একটি অপরাধী শাসন ব্যবস্থার দিকে চলে গেছে, যেখানে জনতার স্বাধীন মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে রয়েছে এবং যেকোনো প্রতিবাদী আন্দোলন দমন করা হচ্ছে।” সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের ফলে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন জানাচ্ছে যে, সরকার যা করছে তা বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের হিসেবে গণ্য হতে পারে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার জানে যে জনগণের মধ্যে বিরোধিতা এবং প্রতিবাদ সৃষ্টি হলে তা দমন করার জন্য তাদের নানান ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে হয়। এতে করে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার মুছে যাচ্ছে। এই প্রতিবেদনের ফলে আরও একবার পরিষ্কার হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারের দমনমূলক আচরণে আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চরম অবনতি ঘটছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বিবৃতিতে আরও বলেছে যে, বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে তবে সরকারকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আদালতে দায়ী করা হতে পারে। তারা সুপারিশ করেছে যে, শিগগিরই জাতিসংঘের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত, যাতে দায়ীদের শাস্তি দেওয়া যায় এবং মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা যায়।
এছাড়া, বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের অধিকারও অত্যন্ত সংকটাপন্ন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, “অধিকার হরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী, এবং এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।” এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং সাংবাদিকরা তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন, যা গণমাধ্যম স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও দেশগুলোর জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে, তেমনি অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, সরকারের এই অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ আরও একবার প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশে জনগণের স্বাধীনতা এবং অধিকার নিশ্চিত করা না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট তৈরি হতে পারে।
বিশ্বব্যাপী সঠিক তথ্য সংগ্রহ, স্থানীয় গণমাধ্যম, এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো অব্যাহত থাকবে, যা শেখ হাসিনার সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য মৌলিক অধিকার এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমএনএসটি ইন্টারন্যাশনাল এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং সরকারের উচিত এই সংকট মোকাবিলায় একটি মানবিক এবং গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ গ্রহণ করা।