ওজন কমিয়ে একটা ছিপছিপে পাতলা, মেদহীন শরীর পাওয়ার জন্য আমরা কত কি না করি! কিন্তু শত রকম ডায়েট চার্ট অনুসরণ করার পরেও পেটের মেদ যেন কমতেই চায় না। তখন মনে হয় এর চাইতে বড় চ্যালেঞ্জ এ জগতে আর কিছুই নেই! কিন্তু তার জন্য হাল ছেড়ে দেওয়ার মানে হয় না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু নিয়ম মেনে চললেই আপনি পেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য। আজ পাঠকের জন্য থাকছে তেমনই ৫ টি টিপস।
১. দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিন
খাবার খাওয়া শুরু করার পর যখন সেই খাবার পেটে যায়, তখন পাকস্থলী থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পৌঁছায়—সহজ ভাষায় পেটের সাথে ব্রেইনের কথাবার্তা হয়। পেট ভরেছে কি ভরেনি তা বুঝতে ব্রেইনের ২০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। দ্রুত খাবার খেলে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে, কারণ পেট ভরে যাওয়ার খবরটি পাকস্থলী থেকে হয়তো অত দ্রুত ব্রেইনে নাও পৌঁছাতে পারে। অতিরিক্ত না খেয়ে ফেলার জন্য ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া এবং খাওয়ার সময় খাবারের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে।
২. মানসিক চাপ মোকাবেলা করুন
মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণেও শরীরে মেদ জমতে পারে। আমরা যখন দিনের পর দিন মানসিক চাপে ভুগি, তখন আমাদের শরীরে ‘কর্টিসল’ নামের একটি হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোন বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে। এই হরমোনের কারণে সহজে পেট ভরে না, বারবার ক্ষুধা লাগে, এবং বেশি খেয়ে ফেলার কারণে যে চর্বিটা তৈরি হয় সেটি শরীর মেদ হিসেবে জমিয়ে রাখে।
মেদ কমাতে তাই মানসিক চাপকে সময়মতো ও সঠিকভাবে মোকাবেলা করা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, পছন্দের কাজ করা, মেডিটেশন ও প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে মানসিক চাপকে মোকাবেলা করতে হবে।
৩. সাদা চাল, সাদা আটার বিকল্প বেছে নিন
সাদা চাল, সাদা আটা তৈরি করার সময় ফাইবার বা আঁশসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ফেলে দেয়া হয়। ফাইবার খাবারকে আস্তে আস্তে হজম করতে সহায়তা করে। ফাইবার ফেলে দেয়ার কারণে খাবার গুলো দ্রুত হজম হয়, রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়।
অন্যদিকে লাল চাল বা ঢেঁকীছাঁটা চাল (কুড়াকাটা চাল হিসেবেও পরিচিত) এবং লাল আটার মতো গোটা শস্যদানা বেশি খাওয়ার সাথে পেটের মেদ কমানোর সম্পর্ক থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
লাল চাল বা লাল আটার স্বাদের সাথে অনেকেই অভ্যস্ত নয়, তাই প্রথমে এটি ভালো না-ই লাগতে পারে। কিন্তু এইটা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করবে এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে।
৪. ‘লো-ফ্যাট বা ফ্যাট-ফ্রি খাবার’ খাওয়ার আগে মোড়ক যাচাই করে নিন
লো-ফ্যাট খাবার খেয়ে মেদ তৈরি হতে পারে—এ কথা শুনে খটকা লাগতেই পারে। এর কারণ হলো, লো-ফ্যাট বা ফ্যাটমুক্ত খাবারকে সাধারণত স্বাস্থ্যকর মনে করা হলেও, এসব খাবারও কখনো কখনো অস্বাস্থ্যকর হতে পারে।
একটি খাবারকে লো-ফ্যাট হিসেবে তৈরি করার সময় সেখান থেকে ফ্যাট সরিয়ে বা কমিয়ে ফেললে অনেকের কাছেই তা কম সুস্বাদু মনে হয়। তাই খাবার সুস্বাদু করে বিক্রি বাড়াতে খাবার প্রস্তুতকারীরা সাধারণত এসব খাবারে অতিরিক্ত চিনি যোগ করে বাজারজাত করে থাকে।
তাই এখন থেকে লো-ফ্যাট বা ফ্যাট-ফ্রি কোনো খাবার কেনার আগে, তাতে চিনি যোগ করা হয়েছে কি না তা মোড়কের লেখা থেকে দেখে নিন।
৫. শুয়ে বসে না থেকে অ্যাকটিভ হোন
শুয়ে-বসে থাকলে যে শরীরে মেদ জমে তা প্রায় সবারই জানা। এর খুবই সহজ সমাধান হলো সপ্তাহে ৫ দিন মাত্র ৩০ মিনিট করে দ্রুত হাঁটা। সারা সপ্তাহে মাত্র আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করেই আপনি অনেক উপকার পাবেন। এতে রোগব্যাধির সম্ভাবনা কমবে, শরীরের চর্বির পরিমাণও কমবে।
রাতারাতি চর্বি কমার আশা করবেন না। হাঁটা চালিয়ে যাবেন, সাথে কিছু ভারোত্তোলন ও অন্যান্য স্ট্রেংথ ট্রেনিং করতে পারলে আরও ভালো। অন্য কোনো ব্যায়াম আপনার জন্য উপযুক্ত হলে সেটিও করতে পারেন। অনেকদিন ধরে কোনো শারীরিক পরিশ্রম করেননি এমন ব্যক্তিও আমাদের শূন্য থেকে পাঁচ কিলোমিটার গাইডটি অনুসরণ করে দৌড়ানো শুরু করতে পারেন।
জিমে না গিয়েও ঘরে বসে, কোন যন্ত্র বা ব্যায়ামের উপকরণের সাহায্য ছাড়াও মেদ কমানোর ব্যায়াম শুরু করা যায়। ইউটিউব বা গুগলে খোঁজ করলে ব্যায়ামের নির্দেশনাযুক্ত অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন।