মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’

রিপোর্টার :
  • আপডেট সময় : সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১০৯ সাংবাদটি পড়া হয়েছে

নীলনদ, পিরামিড ও হাজারো মিনারের দেশ মিশরে আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) রবিবার পালিত হচ্ছে পবিত্র মিলাদুন্নবী।

দেশটিতে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার পরই সর্বোচ্চ ধর্মীয় এবং জাতীয় উৎসব ঈদে মিলাদুন্নবী। মিষ্টি ভোজনপ্রিয় মিশরীয়রা দিনটিকে মোলিদ আল নাবী বা মোলিদ আল রাসুল (সা.) নামেই ডাকেন।

প্রতি বছর আরবি মাস রবিউল আওয়াল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী কায়রোসহ সারাদেশের সুপারশপ থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার অলিগলিতে হালোয়েত আল-মোলিদ (নবীর জন্মদিনের মিষ্টি) নামের মিষ্টির দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেন। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের বাদাম, তিল ও চিনির ঘন সিরার মিশ্রণে তৈরি করা হয় এই মিষ্টি। তার মধ্যে ‘মালবান’ নামে মিষ্টি খুবই জনপ্রিয়।

মিশরের অদ্ভুত এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ‘আরুসাত আল-মোলিদ’ (নবীর জন্ম দিনের পুতুল), চিনি দিয়ে তৈরি এই পুতুলগুলোকে সাদা ও রঙিন কাপড় দিয়ে নববধূ পোশাকের সাজে সজ্জিত ‘আরুসাত আল-মোলিদ’ এদেশের শিশুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।

মিশরে প্রথম মিলাদুন্নবী উদযাপনের প্রচলন শুরু হয় ফাতিমীয় খেলাফত (১০ থেকে ১২ শতক) যুগের সময় থেকে।

জানা যায়, তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী এই দিনে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জন্য বড় বড় ভোজনের আয়োজন করত এবং প্রচুর পরিমাণে হালাওয়েত আল-মোলিদ (মিষ্টি) বিতরণ করত।

জনস্রোতি আছে, ষষ্ঠ ফাতেমীয় খলিফা আল-হাকিম আল-আমর, মোলিদ আল-নাবী উপলক্ষে তার স্ত্রীদের একজনকে নিয়ে শহরে ঘুরতে বের হয়েছিলেন, যখন তিনি মুকুট পরে গাড়িতে জনসাধারণের সামনে হাজির হন, তখন লোকেরা তাকে দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিল যে তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে একজন মিষ্টির কারিগর নববধূর আকারে একটি মিষ্টির পুতুল তৈরি করে খলিফাকে উপহার দিয়েছিলেন। সেই থেকেই এ দেশে আরুসাত আল-মোলিদ প্রচলন শুরু হয়। বেশিরভাগ মিশরীয়ই মনে করেন এর সঙ্গে ধর্মীয় কোনো সম্পর্ক নেই।

শাফি মাজহাবের দেশটিতে ফরজ‌ নামাজের‌ পর সন্মেলিত হাত তুলে দোয়া না পড়লেও গত শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর জাতীয় মসজিদে (ইমাম হোসাইন রা. মসজিদ) ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দুহাত তুলে রাসূল (সা.) এর শানে দুরুদ ও মোনাজাত পরতে দেখা যায়।

মসজিদের বাহিরে সুফি অনুসারীদের দফ বাজিয়ে ইসলামী সংগীত ও রাসূল (সা.) শানে দুরুদ পড়তে দেখা যায়।

এদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ১২ রবিউল আওয়ালের দুই তিনদিন আগে থেকেই সারা মিশর জুড়ে চলে মিষ্টি বিতরণ। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের হালাওয়েত আল-মোলিদ মিষ্টি বিতরণ করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। পাড়া প্রতিবেশীরাও একজন আরেকজনকে মিষ্টি উপহার দেন।

১২ রবিউল আওয়াল বা মিলাদুন্নবীর দিনে অনেক মিশরীয় রোজা রাখেন ও অতিরিক্ত সময় ধরে পবিত্র কোরআন তেলোওয়াত ও সুন্নত নামাজ আদায় করেন। তবে কোনো মসজিদ বা অন্য কোথাও দাঁড়িয়ে মিলাদ কায়েম করতে দেখা যায় না। এদিন সন্ধ্যার পর অনেক মিশরীয় পরিবারকে দেখা যায়, ঘরে রুজ-বি-লাবান (দুধ পায়েস) তৈরি করে ছোট ছোট পাত্রে রাস্তায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যরা যা পছন্দ করছে
© All rights reserved © 2024 bdnews24us.com