পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে সেনাবাহিনী এবং সন্ত্রাসীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চারজন সেনা সদস্য এবং ১৫ জন সন্ত্রাসী রয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি), যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী খাইবার পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়।
সম্প্রতি পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষত খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান অঞ্চলে। ২০২২ সালে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা বেড়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী শনিবার দুটি পৃথক অভিযানে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করে। প্রথম অভিযানটি ডেরা ইসমাইল খান জেলার হাথালা এলাকায় পরিচালিত হয়, যেখানে ৯ সন্ত্রাসী নিহত হয়। পরে, উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার মিরান শাহ এলাকায় দ্বিতীয় অভিযান চালায় সেনাবাহিনী, সেখানে আরও ৬ সন্ত্রাসী নিহত হয়। সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতিতে জানায়, নিহত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং তারা এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (পিআইসিএসএস) এর তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হামলার সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেড়েছে। জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানজুড়ে কমপক্ষে ৭৪টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে ৩৫ নিরাপত্তা কর্মী, ২০ বেসামরিক নাগরিক এবং ৩৬ সন্ত্রাসীসহ মোট ৯১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, ১১৭ জন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫৩ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, ৫৪ জন সাধারণ নাগরিক এবং ১০ জন সন্ত্রাসী রয়েছে।
এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। খাইবার পাখতুনখোয়া, বেলুচিস্তানসহ অন্যান্য অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এতে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে, টিটিপির যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ এবং তাদের পুনরায় সক্রিয় হওয়া। যদিও সরকার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, তবুও এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং কার্যকর আইন প্রণয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
পাকিস্তানের সরকার এবং জনগণের জন্য সন্ত্রাসী হামলা রোধে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এসেছে, অন্যথায় দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।