২ হাজার ব্যক্তির নামে তুলে নেওয়া হয় সেই ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ

রিপোর্টার :
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৩৫০ সাংবাদটি পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ সমবায় ব্যাংকের বারো হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না এমন বক্তব্য দেয়ার পর এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।

রোববার কুমিল্লার কোটবাড়ীতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই ব্যাংকের সোনা কীভাবে গায়েব হলো সেটি নিয়ে কৌতূহল ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে গ্রাহকরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। টাকা উত্তোলনে আমানতকারীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সোমবার ব্যাংকটির হেড অফিস মতিঝিল শাখায় এ চিত্র দেখা গেছে।

কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর কোথায় কী অবস্থা রয়েছে সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। সমবায় ব্যাংকের অবস্থা দেখতে গিয়ে জানলাম, ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকের সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। যারা একসময় ব্যাংকে ছিলেন তারাই বেদখল করে বসে আছেন। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সমবায় ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতেও পারছে না। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার জন্যই ডুবতে বসেছে ব্যাংকটি। তার এই বক্তব্য দেয়ার পরপরই বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই কৌতূহলী হয়ে ওঠেন।

যেভাবে গায়েব হলো সোনা: ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো অনেকটা আড়ালে থাকা বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডেও লুটপাটের মহোৎসব চলেছে। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে জুন মাসের মধ্যে ব্যাংকটি থেকে লুট হয়েছে ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ।

এত স্বর্ণ কারা রেখেছিল-এই প্রশ্নের উত্তর জানতে সমবায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সূত্র জানায়, সমবায় ব্যাংকের লকার থেকে খোয়া যাওয়া ওই ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের মালিক নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেড। তারা তাদের গ্রাহকদের স্বর্ণ বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকা নিয়েছিল, যার সুদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

“ব্যাংক তখন বলেছিলো যে সমিতির সদস্যরা জমা রাখা সোনা লোন পরিশোধ সাপেক্ষে নিতে চাইলে নিতে পারবে। এ সুযোগটি নিয়েছিলো কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তারা ভুয়া ব্যক্তিকে ওই সমিতির সদস্য সাজিয়ে ভুয়া রশিদ বানিয়ে লোন হিসেবে নেয়া টাকা জমা দিয়ে সোনা তুলে নেয়,” বলছিলেন ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক আহসানুল গনি।

মূলত সোনার বাজার দর অনেক বেশি হওয়ায় লোন শোধ করেই ভুয়া ব্যক্তিরা সোনা তুলে নিয়ে লাভবান হয়েছিলো বলে জানান আহসানুল গনি। তিনি বলেন, মামলার চূড়ান্ত চার্জশিটে সাবেক চেয়ারম্যান নাম ছাড়া বাকিদের নাম রেখেছিলো দুদক। চার্জশিটে নাম থাকা ব্যক্তিরা এখন জামিনে আছেন। তবে মামলাটি বিচারাধীন আছে।

অর্থাৎ ওই ব্যাংকের সোনা নিয়ে যা ঘটেছে তা হলো নারায়ণগঞ্জ কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির সদস্যরা সোনা বন্ধক রেখে লোন নিয়েছিলো।

পরে ওই নামেই ভুয়া রশিদ ও কাগজ তৈরি করে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লোনের টাকা ফেরত দিয়ে সোনা তুলে নেয় একদল ব্যক্তি। প্রায় আট হাজার ভরি তুলে নেয়ার পর ব্যাংকের মধ্যে প্রকাশ হয়ে যায় ঘটনাটি।

ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক বলেন, তারা যেই নামের বিপরীতে যত টাকা লোন নিয়েছিলো সেই টাকা কিন্তু দিয়েছিলো ব্যাংককে। কিন্তু যারা এসব নামে এটি করেছেন তারা ছিল ভুয়া।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যরা যা পছন্দ করছে
© All rights reserved © 2024 bdnews24us.com