৩১ বছর পর দেশে ফিরছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা আবুবকর

রিপোর্টার :
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ২৭৬ সাংবাদটি পড়া হয়েছে

মালয়েশিয়া প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি থেকেই ৭০ বছর বয়সি এক রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে নিয়ে আজকের এই লেখা। পরিবারের সুখের আশায় গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রবীণ আবু বকর।

প্রবাস জীবনের এই দীর্ঘ সময়ে একবারের জন্যও দেশে যাননি। মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের ক্লাংয়ের একটি মলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী তিনি। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে একদিনের জন্যও কাজ থেকে ছুটি নেননি। ৩১ বছর পর দেশে ফিরছেন এই যোদ্ধা।

বৃহস্পতিবার ক্লাং রয়্যাল সিটি কাউন্সিল তাকে পুরস্কৃত করে এবং প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাক্ষাত্কারে কথা বলছিলেন। নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করে আবু বকর তার উপার্জনের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়েছেন।

প্রবীণ আবু বকর জানিয়েছেন, বর্তমানে তার মেয়েদের একজন বাংলাদেশের বিচারক, এক সন্তান প্রকৌশলী এবং অন্যজন ডাক্তার। সন্তানদের এই সফলতার জন্য যেন প্রবাসে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার এই উৎসর্গের প্রতিদান দিয়েছেন সন্তানেরা, এটি তার বড় সান্ত্বনা। তিনি সন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, আমি মালয়েশিয়ায় অসার আগে শুনেছি এখানে প্রচুর কাজ। এমন কোনো কাজও যদি থাকে যা কেউ করতে চায় না, তা আমি করব। আমি একবারের জন্যও অসুস্থতার ছুটি নেইনি, ইনশাআল্লাহ আমি এখনো শক্তিশালী।

হিউম্যানস অব কুয়ালালামপুরের ইনস্টাগ্রাম পেজে কথা বলতে গিয়ে আবু বকর বলেছেন, তিনি ৩১ বছর আগে তার জন্মভূমি বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন যখন তার পঞ্চম সন্তানের বয়স ছিল মাত্র ছয় মাস। তারপর আর দেশে যাওয়া হয়নি। আমার পরিবারকে মিস করি এবং তারাও আমাকে মিস করে। তবে আমার এই ত্যাগ তাদের জন্য এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য।’

পোস্টটি নেটিজেনদের কাছ থেকে শুভকামনা অর্জন করেছে এবং কেউ কেউ ‘চাচা’-র নিরাপদ যাত্রার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছে। নিরাপদ ভ্রমণ, চাচা। সবসময় আপনার সুখ কামনা করছি। আমাদের দেশে কাজ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ… আমরা সত্যিই এটির প্রশংসা করি। একজন পিতার ত্যাগ কত মহান। তার সন্তানেরা তার ভাল যত্ন নিন, যেমন তিনি এত বছর তাদের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন।

প্রবাসীদের জীবন কেমন কাটে? এ প্রশ্নটা অনেকেরই। কারও কারও রয়েছে বিশেষ কৌতুহল। অন্তত যারা প্রবাসী নন। কৌতুহলটা তাদেরই বেশি যাদের স্বজনেরা প্রবাসী। আমজনতার আগ্রহ যে নেই, তা নয়। তা ক্ষেত্রবিশেষে। তাদেরও কৌতুহল হয়, যখন কোনো প্রবাসী হয়ে ওঠে সেলিব্রেটি।

আমরা বাঙালি প্রবাসীরা কেমন আছি? ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বললে কীভাবে কাটছে আমাদের জীবন? দেশের অস্থিতিশীল গুমোট রাজনৈতিক পরিবেশের বাইরে থেকে আমরা কী খুব ভালো আছি? দেশ ও স্বজনদের দূরে রেখে আমাদের প্রবাসজীবন কী খুব স্বস্তিতে কাটছে? নাকি সোনার হরিণের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরাও ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত।

এই প্রশ্নগুলো করার পেছনে অন্য কোনো অযাচিত উদ্দেশ্য নেই। সুখ-দুঃখ আর কষ্টের অনুভূতিগুলো বলার প্রয়াসমাত্র। কারণ, কারও কাছে যাপিত জীবন বড্ড বেশি অহংকারী। কারও কাছে বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রবাস মানেই কি নিঃসঙ্গতা? একাকিত্ব? নাকি প্রবাস মানেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম। কেমন কাটে প্রবাসজীবন? কেউ বলে মলিন নয়তো ফ্যাকাশে। কেউ বলে পানসে। কারও কাছে রোমাঞ্চকর, অতিমাত্রায় স্বাধীনতা। কারও কাছে জীবনের সোনালি অধ্যায়ের যাত্রা শুরু কেউ ভাবছে, এই তো চলছি সোনার হরিণের পেছনে। আবার কেউ ফেলে দীর্ঘনিঃশ্বাস। যেন কোনো এক নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত। এই ভিন্ন ভিন্ন ভাবনাগুলো তাদের, যারা প্রবাসী। আর যারা প্রবাসী নন, তাদের ধারণাটা কেমন প্রবাসীদের সম্পর্কে? এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল হলেও কিছুটা তো উপলব্ধি করতে পারি।

তাই বলছি। যতদূর উপলব্ধি করেছি, প্রবাসী সম্পর্কে অপ্রবাসীদের ধারণা পুরোটাই অর্থকেন্দ্রিক। অর্থাৎ, প্রবাসী মানে অঢেল অর্থ উপার্জনের কারিগর। স্বজনেরা অন্তত ওই একটি বিষয়ে পরোপুরি সজাগ। প্রবাসী মানে, থাকবে অর্থিক স্বচ্ছলতা। এই ধারণাটা মোটেই ভুল নয়। কিংবা নতুন কিছু নয়। এটা তো ঠিক বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর চাবিকাঠি তো দীর্ঘকাল ধরেই প্রবাসীদের কাঁধে। বাংলাদেশ ব্যাংক বছর ঘুরে গুনছে হাজার কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা! তাই বুঝতে কারও কষ্ট হয় না, প্রবাসী মানে হাড়ভাঙা পরিশ্রমী একদল খেটে খাওয়া মানুষ।

এই রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলেন, ‘আমার প্রয়োজন খুবই সামান্য। উপার্জনের বেশিরভাগ অংশই পরিবারের জন্য পাঠিয়ে দিই। সকালের নাস্তা করে কাজ করতে চলে যাই, আবার ফিরে আসি। পরিবারের সঙ্গে প্রতিদিনি ফোনে কথা হয়।’ সুযোগ পেলে বিশ্রাম নেন।

পরের দিন আবার একইভাবে দিন চলে যায় এই প্রবাসীর। দেশে ফিরে যাওয়ার প্রবল আগ্রহ দেখিয়ে, এ বছরের ডিসেম্বর মাসে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সদস্যদের কাছে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই নাতিকেও প্রথম দেখবেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যরা যা পছন্দ করছে
© All rights reserved © 2024 bdnews24us.com