14 1

৮ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট

অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে আট দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের নেতারা এবং দেশের বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের সাধু-সন্ন্যাসীরা। তারা বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। আট দফা বাস্তবায়নে যা যা করণীয় তা করবেন। এ দাবিতে শারদীয় দুর্গাপূজার পর আগামী ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ করবেন।

জোট নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশ তাদের পিতৃভূমি-মাতৃভূমি। এখানেই তাদের জন্ম, এখানেই তারা মৃত্যুবরণ করবেন। এ দেশ ছেড়ে তারা কোথাও যাবেন না। দাবি বাস্তবায়নে তারা রাজপথে থেকে লড়াই করবেন।

শুক্রবার (০৪ অক্টোবর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট আয়োজিত এক গণসমাবেশে এসব কথা বলেন জোটের নেতারা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে এই জোট গঠিত। দেশব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়ি-ঘর-মন্দির, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট, জোরপূর্বক দখল, হত্যা, ধর্ষণ, দেশত্যাগের হুমকি, মব জাস্টিসের নামে আইনবহির্ভূতভাবে হত্যাচেষ্টাসহ যাবতীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধকরণপূর্বক প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান, দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পেশকৃত ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

গত ১৩ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ৮ দফা দাবি পেশ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। তাদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় অবিলম্বে আট দফার বাস্তবায়ন চান তারা। ৮ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট

আট দফা হলো-

১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য ‘নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠনপূর্বক দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

২. অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা।

৩. ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করা।

৪. হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা।

৫. ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ’ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করা।

৬. সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও সব উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করা।

৭. ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষাবোর্ড’ আধুনিকায়ন করা।

৮. শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দেওয়া। পাশাপাশি প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করা।

গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের হাটহাজারি পুন্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী মহারাজ। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের আট দফা দাবি অত্যন্ত ন্যায্য। তা বাস্তবায়নে শারদীয় দুর্গাপূজার আগেই আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। অন্যথায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। দুর্গাপূজার পর আগামী ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সারা দেশের বিভাগীয় শহর, তারপর জেলা-উপজেলায় সমাবেশ হবে। সবশেষ ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে, যেখানে সারা দেশ থেকে সনাতনী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা অংশ নেবেন।’

তিনি আরও বলেন, তারা রাজনীতিবিদদের ওপর আস্থা রাখতে চান। তবে হিন্দু সম্প্রদায় কোনো বিশেষ দলের নয়। সুতরাং কেউ হিন্দু সম্প্রদায়ের গায়ে আওয়ামী লীগের ট্যাগ দিবেন না। স্বাধীনতাপরবর্তী প্রতিটি সরকার সনাতনীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। আমাদের সামনে আশার মুলা ঝুলিয়েছে। কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া হামলা-নির্যাতনের ঘটনার বিচার করেনি। তাই যে রাজনৈতিক দল আমাদের দাবি মানবে, আগামীতে আমরা সম্মিলিতভাবে সেই দলকেই ভোট দিব।

সমাবেশে শ্রীমদ রবিসানন্দ মহারাজ বলেন, আট দফা দাবিতে আমরা সারা দেশে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।

শ্রীমদ গোপীনাথ ব্রহ্মচারী মহারাজ বলেন, সনাতন ধর্ম শান্তির ধর্ম। যে ধর্মের মানুষ কোনো বিশৃঙ্খলা করে না। অথচ স্বাধীনতাপরবর্তী প্রতিটি সরকার সনাতনীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, অবিলম্বে আট দফা মেনে নিন। নইলে সাধু সন্ন্যাসীরা মঠ-মিশন ছেড়ে রাজপথে নেমে আসবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, গত ৫ আগস্ট যদি বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়, তাহলে সেখানে সনাতনীরা পরাধীন কেন?

সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের উপদেষ্টা হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- হিন্দু মহাজোটের উত্তম কুমার দাস, সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের পক্ষে পলাশ কান্তি দে, সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, প্রদীপ কান্তি দে, আশীষ চন্দ্র দাস, উজ্জ্বল কর্মকার, নিতাই দেবনাথ, সুমন কুমার রায়, রনি রাজবংশী, প্রসেনজিৎ দাস, পিযুষ দাস, নির্মল সরকার, সাংবাদিক শ্যামল কান্তি নাগসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী শিক্ষার্থী এবং সনাতনী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top