চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২২৪ কন্যা শিশু। একই সময়ের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৮১ জন এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ১৩৩ কন্যা শিশু।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘কন্যা শিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন’ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
এডুকো বাংলাদেশের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক থেকে সংগৃহীত তথ্যের ওপর তৈরি করা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা আহসানা জামান (এ্যানী)। তিনি বলেন, বর্তমানে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া সত্ত্বেও ধর্ষণ যেন প্রতিযোগিতা করে বেড়েই চলেছে।
গত ৮ মাসে মোট ২২৪ কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ৩২ কন্যা শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ১৩৪ জন, গণধর্ষণের শিকার হয় ৩৩ কন্যা শিশু, প্রতিবন্ধী কন্যা শিশু রয়েছে ৯ জন।
তিনি আরও বলেন, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী ভেদে কেউ বাদ যায়নি এই জঘন্যতম বর্বর আচরণ থেকে। প্রেমের অভিনয়ের ফাঁদে ফেলে ৩৫ কন্যা শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে এক বছর বয়সের শিশুদেরও। যারা যৌনতা বোঝা তো দূরের কথা, কথা বলতেও শেখেনি।
সৈয়দা আহসানা জামান বলেন, গত ৮ মাসে ৮১ কন্যা শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আগে থেকে পারিবারিক শত্রুতার জের, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন। পাশাপাশি ২০ কন্যা শিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কেন মৃত্যু হয়েছে, এ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো কারণ বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
আত্মহত্যার তথ্য তুলে ধরে এ্যানী বলেন, কন্যা শিশুরাই শুধু নয়, কোনো একজন শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে এটি মোটেও কাম্য নয়। এর মাধ্যমে পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের ওপরও দায়ভার এসে পড়ে। কিন্তু গত ৮ মাসে ১৩৩ কন্যা শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এর পেছনে মূলত যে কারণগুলো কাজ করেছে তা হলো- হতাশা, পারিবারিক মতানৈক্য বা দ্বন্দ্ব, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া এবং যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ, যা নির্ভয়ে প্রকাশ করার মতো কোনো আশ্রয়স্থল না থাকা।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘কন্যা শিশু যদি বঞ্চনার শিকার হয়, তাহলে পুরো জাতিকে এর মাশুল দিতে হবে। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে ভালো করলেও পুষ্টির ক্ষেত্রে ভালো করতে পারিনি। কারণ মূলত হচ্ছে কন্যা শিশুদের প্রতি অবহেলা ও তাদের প্রতি যথাযথ বিনিয়োগ না করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জন্মের পর থেকেই ছেলে শিশুদের তুলনায় কন্যা শিশুদের অপুষ্টির হার সব থেকে বেশি। এমনকি অতীতে কন্যা শিশুরাই স্কুলে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হতো। এখন অনেক ক্ষেত্রে স্কুলে তাদের নাম লেখা থাকে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে তারা স্কুলে যায় না। বিদ্যা অর্জন থেকে তারা বঞ্চিত হয়। পাশাপাশি কন্যা শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তাদের যাদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়, তাদেরও বয়স এই অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাদের তুলনায় অনেক বেশি। এর ফলে তারা অল্প বয়সে গর্ভবতী হয়ে যায়। যে কারণে মা ও শিশু দুজনই অপুষ্টিতে ভোগে।’
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহসভাপতি শাহীন আকতার ডলি, গুড নেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাঈনুদ্দিন মাইনুল, এডুকো বাংলাদেশের চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রোটেকশনের স্পেশালিস্ট মো. শহীদুল ইসলাম, এডুকো বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির ম্যানেজার হালিমা আক্তার প্রমুখ।