hacina

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ পরামর্শ

গত ১২ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়, এবং এটি গত বছরের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের তত্ত্বাবধানে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে পুলিশ, র‍্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সহায়তায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানাবিধ ঘটনা ঘটেছে। এতে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের মতো গুরুতর ঘটনা দেখা গেছে। এই সময়ে প্রায় ১,৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১২ শতাংশ ছিল শিশু। এছাড়া, ১১,৭০২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘ এই প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষভাবে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ বন্ধ হয়ে যাবে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটি দেশের ভোটারদের অধিকাংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে। তাই, রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব এবং তাদের কর্মকাণ্ডে মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

এছাড়া, জাতিসংঘ সরকারের কাছে পরামর্শ দিয়েছে যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের মতামত ও অধিকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা যেন মানবাধিকার নীতির প্রতি সম্মান জানায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ব্যাপক আলোচনা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষদের মধ্যে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলে জাতিসংঘ উল্লেখ করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারের উচিত রাজনৈতিক সহনশীলতা বজায় রাখা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিবেশ তৈরি করা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এটি দেশের গণতন্ত্রের শক্তিশালী ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর উদ্বেগ রয়েছে এবং বাংলাদেশের সরকারকে আরও দায়িত্বশীলভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top