bd oill

ব্রেকিং নিউজ ; রোজার আগে বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম

বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের বাজারে একাধিক অভিযোগ উঠেছে, বিশেষত সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে। অভিযোগ করা হচ্ছে যে, পরিশোধনকারী মিলমালিকরা সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন, যাতে তারা রমজান মাসে অধিক মুনাফা করতে পারেন। বাজারে ভোজ্যতেল বিশেষ করে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সরকার গত ১৬ ডিসেম্বর সয়াবিন ও পামঅয়েলের আমদানিতে শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি এবং অগ্রিম আয়কর মওকুফ করে এবং ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। কিন্তু তার পরও ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এর ফলে ভোক্তারা বর্তমানে ১৬৫ থেকে ১৭৩ টাকায় সয়াবিন তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রমজান উপলক্ষে সয়াবিন তেলসহ পাঁচটি প্রয়োজনীয় পণ্য কম দামে বিক্রি শুরু করেছে। তবে, বাজারের অন্যান্য অংশে সয়াবিন তেলের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে, তবে দেশের বাজারে তা প্রতিফলিত হচ্ছে আরো দ্রুত এবং অপ্রতিরোধ্যভাবে।

এছাড়া, সয়াবিন তেলের বাজারে একাধিক প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করছে, বিশেষ করে কিছু বড় কোম্পানি, যেমন সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতা কম থাকায় বাজারের দামের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি। ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়ে সাধারণ মানুষ বেশি দামে তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিশ্লেষক এবং বাজার গবেষকরা বলছেন, বিশ্বের উৎপাদক দেশগুলো রফতানি শুল্ক বাড়ানোর কারণে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। এছাড়া, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের উৎপাদন বাড়ানোর পরেও দাম কেন বাড়ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বিষয়টি মনিটর করছে। বাণিজ্য সচিব আবদুর রহিম খান জানিয়েছেন, সয়াবিন তেল আমদানি এবং সরবরাহ যথেষ্ট পরিমাণে হয়েছে এবং বাজারে কোনো সরবরাহ সংকট নেই। তিনি আরও বলেছেন, যদি কেউ সয়াবিন তেল মজুত করে দাম বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর জন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেও দেশে তেলের দাম এখনো বাড়ানো হয়নি। তিনি বলেন, “কোম্পানিগুলো লোকসানেও তেল বিক্রি করছে এবং দাম বাড়ানোর জন্য যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন মেনে নেয়নি।”

কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন জানিয়েছেন, সরবরাহকারীরা সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন এবং এতে বাজারে চাপা সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রমজান মাসে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন নিশ্চিত করেছেন যে, রমজান উপলক্ষে সয়াবিন তেল বা অন্য কোন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই। তিনি বলেছেন, সরকার বাজারের পরিস্থিতি নজরদারিতে রেখেছে এবং দাম বৃদ্ধি করার জন্য যে কোনো ধরনের কারসাজি রোধ করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top