July Declaration Analysis

জুলাই ঘোষণাপত্র: ডেভিড বার্গম্যানের চাঞ্চল্যকর বিশ্লেষণ ও বিতর্ক

আরে বন্ধু, কেমন আছো? আজ তোমার সাথে একটা দারুণ ইন্টারেস্টিং বিষয় নিয়ে কথা বলবো। আমাদের দেশের রাজনীতিতে সম্প্রতি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে, তাই না? আর এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের পর যুক্তরাজ্যের খ্যাতিমান সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান কিছু জোরালো মন্তব্য করেছেন, যা এই আলোচনার পালে নতুন করে হাওয়া দিয়েছে। চলো, তাঁর মতামতগুলো একটু খুঁটিয়ে দেখি, যাতে পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হয়।

ডেভিড বার্গম্যান: সাংবাদিকতার এক পরিচিত মুখ

ডেভিড বার্গম্যান একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক, যিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে তাঁর কাজের জন্য বেশ পরিচিত। তাঁর বিশ্লেষণ প্রায়শই বিতর্ক তৈরি করে, তবে সেগুলো চিন্তার খোরাক জোগায়।

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বার্গম্যানের মূল পর্যবেক্ষণ

গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যখন এই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করলেন, ঠিক তার পরপরই ডেভিড বার্গম্যান তাঁর ফেসবুক পোস্টে নিজের প্রাথমিক মতামত জানিয়ে দেন। তিনি এই ঘোষণাপত্রের কিছু দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা নিচে আলোচনা করা হলো:

১. ইতিহাসের পক্ষপাতদুষ্ট বর্ণনা

বার্গম্যান বলছেন, ঘোষণাপত্রে যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে নিয়ে, সেটা নাকি ভীষণ একপেশে। তাঁর মতে, যারা আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা শুধু দলটি সরকারে থাকাকালে কী করেছে সে জন্য নয়, বরং তাদের সম্পর্কে তাদের যে একটা মনোভাব, সেটাকে একটা রাজনৈতিক বৈরিতা বলা যায়। ঘোষণাপত্রের অনেকটাই পড়ে মনে হয় যেন এটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের বিরোধী ও সমালোচকদের লেখা একটি রাজনৈতিক বক্তব্য।

২. অতীতের বিতর্কের চেয়েও সমস্যাজনক

বার্গম্যান মনে করছেন, সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে এই ঘোষণাপত্রে যে রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক বয়ান তুলে ধরা হয়েছে, তা ১৯৭১ সালের যুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ যে রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক ইতিহাস ব্যবহার করেছিল, তার চেয়েও বেশি সমস্যা তৈরি করতে পারে। আওয়ামী লীগের সময়ে তাদের ওই ইতিহাস নিয়ে (দলটির সমালোচনাকারীরা) কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। এই ঘোষণাপত্র অতিমাত্রায় পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক একটি ইতিহাসের বর্ণনাকে সরিয়ে, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক আরেকটি বর্ণনাকে প্রতিষ্ঠা করছে। কে জানত, ৫ আগস্ট আসলে সেটি নিয়েই ছিল!

৩. ভুল তথ্য ও উপেক্ষা

এখানে ডেভিড বার্গম্যান বেশ কিছু গুরুতর ত্রুটির কথা তুলে ধরেছেন, যা ঘোষণাপত্রে উপেক্ষা করা হয়েছে, ত্রুটি রয়েছে অথবা ভুল উপস্থাপনা করা হয়েছে:

  • বাকশাল এবং যুদ্ধ-পরবর্তী কাজ: ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনকালকে শুধু একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশালের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। যুদ্ধপরবর্তী জাতি গঠনে আওয়ামী লীগ যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল, সেগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ৪)।
  • সংবিধানের ‘দুর্বলতা’: এতে ১৯৭১–পরবর্তী ‘জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার’ দায় ‘সংবিধানের খসড়া তৈরির প্রক্রিয়া ও কাঠামোর দুর্বলতার’ ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বার্গম্যান বলছেন, আওয়ামী লীগ যতটা সফল হওয়ার কথা ছিল ততটা না হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকলেও, সংবিধানের খসড়া তৈরি বা কাঠামোকে তিনি কখনো কারণ হিসেবে শোনেননি। তাঁর ধারণা, বিশেষ একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী এটি বলছে, যারা নতুন একটি সংবিধানকে ন্যায্যতা দিতে চায়।
  • ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড উপেক্ষা: ঘোষণাপত্রে ১৯৭৫ সালের আগস্টে সেনাসদস্যদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের ১৬ জন সদস্যের হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়নি। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর ধরে সামরিক শাসন শুরু হয়েছিল (অনুচ্ছেদ ৪)।
  • জিয়াউর রহমানের সময়কাল: ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত মুজিব–পরবর্তী সময়ে যখন জিয়াউর রহমান (যিনি পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা হন) ক্ষমতায় ছিলেন, ওই সময়টাকে ঘোষণাপত্রে উপেক্ষা করা হয়েছে। এটিকে সাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে ‘সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব’ হিসেবে, যা ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তনের’ পথ সুগম করেছিল (অনুচ্ছেদ ৪)। বার্গম্যান এটিকে ‘অতিমাত্রায় বিএনপিপন্থী বর্ণনা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
  • ১/১১ নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’: ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘১/১১’ – যখন ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সরিয়ে সামরিক বাহিনী–নিয়ন্ত্রিত সরকার এসেছিল, তা ছিল ‘ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার’ ফল (অনুচ্ছেদ ৬)। কিন্তু বার্গম্যানের মতে, প্রকৃতপক্ষে এটি হয়েছিল বিএনপি সরকার যখন নির্বাচনে কারচুপি করার চেষ্টা করছিল এবং সেটি থামানোর একমাত্র পথ ছিল সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ। সে সময় এ সিদ্ধান্ত বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।
  • আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা: ঘোষণাপত্রের আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে ১/১১–এর পেছনের ‘ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থা’ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছিল (অনুচ্ছেদ ৬ ও ৭)। কিন্তু বার্গম্যানের মতে, ২০০৯ সালের নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনগুলোর একটি হিসেবে দেখা হয়। সে সময় স্পষ্টভাবেই আওয়ামী লীগ ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।
  • আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসন: ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল তা উল্লেখ না করে ঘোষণাপত্রে এই ধারণা দেওয়া হয়েছে যে ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে দলটি ‘ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী’ ছিল (অনুচ্ছেদ ৭)। বার্গম্যান এটিকে ‘একদম অসত্য’ বলেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, বাস্তবতা হলো, ক্ষমতায় থাকার সময় যতই গড়িয়েছিল, ততই অগণতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

৪. আওয়ামী লীগ শাসনের একতরফা চিত্র

ঘোষণাপত্রে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনকালকে সম্পূর্ণরূপে একটিমাত্র দিক দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। বার্গম্যান মনে করেন, এ ধরনের উপস্থাপন কোনো বৈধ নথির চেয়ে সাধারণত বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রচারণামূলক লেখায় দেখা যায়। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালের বর্ণনা দিতে গিয়ে ঘোষণাপত্রে এই বিশেষণগুলো ব্যবহার করা হয়েছে: ‘গণবিরোধী’, ‘স্বৈরাচারী’, ‘মানবাধিকারবিরোধী’, ‘মাফিয়া ও ব্যর্থরাষ্ট্র’, ‘সীমাহীন দুর্নীতি’, ‘ব্যাংক লুট’ এবং অনুসরণ করা নীতিগুলো ‘প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করছে’। বার্গম্যানের মতে, এই বর্ণনাগুলোর কয়েকটি অবশ্যই সত্য। কিন্তু ঘোষণাপত্রে আওয়ামী লীগের অন্য আরেকটি দিক পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নারীশিক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রকৃতপক্ষে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছিল তারা। বার্গম্যান বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালে একই সঙ্গে দুটি বয়ানই ছিল, তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ইতিবাচক বয়ানগুলোকে ছাড়িয়ে যায় নেতিবাচক বয়ান।

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ১১): ‘যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ষোলো বছর যাবৎ নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেলজুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।’ বার্গম্যানের মতে, ঘোষণাপত্রে বর্ণনা করা এসব ঘটনা ঘটেছিল, তবে এখানে যেভাবে অতিরঞ্জিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, সেভাবে ঘটেনি।

৫. সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে প্রশ্ন

আরেকটা মজার বিষয় হলো, ঘোষণাপত্রে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীনে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া মতামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেটি অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধতা দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ২০)। কিন্তু বার্গম্যান বলছেন, তাঁর জানামতে, স্বাক্ষরকৃত ওই আদেশ কেউ দেখেননি। এ থেকে বিচারকেরা আদৌ কখনো স্বাক্ষর করেছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে আরও জানতে উইকিপিডিয়ার এই পৃষ্ঠাটি দেখতে পারো।

৬. ‘আইনি সুরক্ষা’ ও আইনের শাসন

যদিও এটা ঠিক যে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে ‘আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র ও জনতাকে’ ভবিষ্যতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার শিকার হওয়া থেকে একধরনের ‘আইনি সুরক্ষা’ দেওয়া উচিত (অনুচ্ছেদ ২৪), তবে বার্গম্যানের মতে, শব্দের ব্যবহার দেখে মনে হয়েছে আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তিনি বলছেন, ‘আইনের শাসনের’ দিক দিয়ে এখানে সমস্যা রয়েছে, যে আইনের শাসন বাংলাদেশের মানুষ আশা করে বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

৭. সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে (অনুচ্ছেদ ২৭)’। বার্গম্যান এটাকে ‘লজ্জাজনক’ বলছেন। তিনি মনে করেন, এমন একটি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতমূলক দলিল যদি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে তা অবশ্যই লজ্জাজনক হবে।

৮. কিছু ইতিবাচক দিকও আছে

তবে সব নেতিবাচক মন্তব্যের ভিড়ে ডেভিড বার্গম্যান কিছু ইতিবাচক দিকও জুলাই ঘোষণাপত্রের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন:

  • এটি ১৯৭১–কে জাতির ইতিহাসে ন্যায্য স্থান দিয়েছে এবং বলেছে যে লড়াইটি ছিল একটি ‘উদার গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রের জন্য (অনুচ্ছেদ ১ ও ২)।
  • এটি আন্দোলন ও অভ্যুত্থানকে বেশ নির্ভুলভাবে বর্ণনা করেছে।
  • এটি বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ভালোভাবে তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়েছে, তারা ‘সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের’ অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে (অনুচ্ছেদ ২২)। একই সঙ্গে ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে’ (অনুচ্ছেদ ২৫)।
  • এটি সঠিকভাবে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীসহ বিভিন্ন পক্ষের হাতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ‘প্রায় এক হাজার’।

৯. অধ্যাপক ইউনূসের ভূমিকা

সবশেষে বার্গম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকায় কিছুটা হতাশ। তিনি মনে করেন, যে ইউনূস দলীয় রাজনীতিতে জড়িত না থাকার সুবিধাজনক অবস্থান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে এসেছিলেন, তিনি এই ঘোষণাপত্রে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হয়েছেন। বার্গম্যানের মতে, এই ঘোষণাপত্রে তাঁর সম্পৃক্ততা তাঁর এককালের উজ্জ্বল ভাবমূর্তির কফিনে পেরেক ঠুকে দেওয়ার মতো হবে।

১০. ঘোষণাপত্রের দৈর্ঘ্য

বারগম্যানের মতে, এই ঘোষণাপত্র আরও সংক্ষিপ্ত হতে পারত। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ নিয়ে ১ ও ২ নম্বর অনুচ্ছেদ ছাড়া এই ঘোষণাপত্রে আর কোনো রাজনৈতিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা উচিত হয়নি।

ডেভিড বার্গম্যানের শেষ কথা

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে নিজের প্রথম মতামত দেওয়ার পর বার্গম্যান পরে আরও একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি তাঁর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনাকে একটু নরম করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, হ্যাঁ, ইউনূসকে সমালোচনা করা উচিত কারণ তিনি ইতিহাসের অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক একটি বয়ানে নিজের নাম যুক্ত করেছেন, যা দেশের সংবিধানে সংযোজন হতে যাচ্ছে। তবে তিনি আরও যোগ করেছেন যে, তিনি অধ্যাপক ইউনূস ও বর্তমান সরকারের অন্য কিছু সিদ্ধান্ত ও নীতির সমালোচনা করতেই পারেন (বিশেষ করে, যেভাবে নির্বিচারে আটক ইত্যাদি চালানো হয়েছে), তবে একই সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস ও তাঁর সরকার যেসব কাজ করেছে ও অর্জন এনেছে, তার অনেক কিছুতে তিনি সমর্থনও জানান।

এই পুরো আলোচনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়ে গেছে। ডেভিড বার্গম্যানের এই বিশ্লেষণ আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই ঘোষণাপত্রের গভীর প্রভাব সম্পর্কে আরও জানতে, তুমি আমাদের অন্যান্য রাজনৈতিক বিশ্লেষণগুলোও দেখতে পারো।

উপসংহার: ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলিল, যা দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে। ডেভিড বার্গম্যানের বিশ্লেষণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কোনো বিষয়কেই একপেশেভাবে দেখা ঠিক নয়, বরং সব দিক থেকে বিশ্লেষণ করা উচিত। নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও বিশ্লেষণ আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

আপনার কী মনে হয়? ডেভিড বার্গম্যানের এই অভিমত কতটা সঠিক? নিচে কমেন্ট করে আপনার মতামত জানান।

বাংলাদেশ নিউজ২৪ এর মতামত: জুলাই ঘোষণাপত্র ঘিরে আলোচনা ও সমালোচনার এই ধারা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য অপরিহার্য। তবে, নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা সবার জন্যই জরুরি, কারণ এটিই একটি সুস্থ সমাজের ভিত্তি।

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যুক্তরাজ্যে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের গভীর বিশ্লেষণ ও বিতর্কিত মন্তব্য। কেন এই ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তিনি? জানুন বিস্তারিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top