বন্ধুরা, আইন বড় নাকি জনতার রায়? এক নতুন বিতর্কের সূচনা!
কেমন আছেন সবাই? চলুন আজ একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় নিয়ে আড্ডা দেওয়া যাক। আচ্ছা, ভাবুন তো, যখন লাখো জনতা রাস্তায় নেমে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে, সেই পরিবর্তনের কি কোনো আইনি ভিত্তি থাকে? নাকি জনতার ইচ্ছাই সবচেয়ে বড় আইন? ঠিক এমনই এক গভীর প্রশ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আমরা সবাই একটা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্যই যেন এই জাতীয় সনদের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কেউ বলছেন এটা দেশের জন্য একটা ঐতিহাসিক দলিল হতে চলেছে, আবার কেউ এর আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
আজ আমরা সহজ ভাষায় পুরো ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করব। কী এই জুলাই সনদ? কেন এটা এত গুরুত্বপূর্ণ? আর এর ভবিষ্যৎই বা কী? চলুন, গভীরে ডুব দেওয়া যাক!
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫: আসলে কী এটা?
সহজ কথায়, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ হলো একটি প্রতিশ্রুতির দলিল। জাতীয় ঐক্যমত কমিশন এই সনদের খসড়াটি তৈরি করে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত পরিবর্তনগুলোকে একটি স্থায়ী সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় রূপ দেওয়া।
এই সনদে এমন কিছু অঙ্গীকার রয়েছে, যা আগামী দিনে দেশ কীভাবে চলবে, তার একটি রূপরেখা দেবে। অনেকটা একটা ‘মাস্টারপ্ল্যান’-এর মতো, যা দেশের শাসনব্যবস্থা, আইন এবং জনগণের অধিকার নিয়ে কাজ করবে।
ঐক্যমতের পথে যাত্রা: দলগুলো কী বলছে?
সম্প্রতি একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এই সনদ নিয়ে কথা বলেছেন। তার কথা থেকে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারি:
- সংশোধন ও সম্মতি: জাতীয় ঐক্যমত কমিশন খসড়াটি সব দলের কাছে পাঠানোর পর, দলগুলো তাদের মতামত ও সংশোধনী জমা দিয়েছে। নেতা জানান, তাদের দলও কিছু শব্দগত ও বাক্যগত অসামঞ্জস্য ঠিক করে জমা দিয়েছে, যা খুব বড় কোনো পরিবর্তন নয়।
- বাস্তবায়নের অঙ্গীকার: সনদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হলো, নতুন সরকার গঠনের পর দুই বছরের মধ্যে এর সমস্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এই প্রস্তাবে প্রায় সব দলই একমত হয়েছে।
- আইনি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি: সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যদি সংবিধান, বিভিন্ন আইন বা বিধি-বিধান পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়, তবে দলগুলো সেই প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে। তারা বলছে, এই অঙ্গীকারনামায় সবাই সই করবে, যা একটি ঐতিহাসিক জাতীয় সম্মতিতে রূপ নেবে।
এই ঐক্যমত্যের প্রক্রিয়াটিই সনদটিকে অন্য যেকোনো দলিলের চেয়ে শক্তিশালী করে তুলেছে। কারণ এখানে শুধু একটি দল নয়, বরং দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো একসাথে একটি ortak লক্ষ্যে কাজ করার কথা বলছে।
আইনের ঊর্ধ্বে জনতার রায়? মূল বিতর্ক এখানেই!
এখন আসা যাক সবচেয়ে জরুরি প্রশ্নে। এই যে সনদ, যার ওপর ভিত্তি করে দেশ চলবে, এর কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে? নাকি এটা শুধুই কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি চুক্তি?
এখানেই রাজনৈতিক নেতারা একটি অসাধারণ তত্ত্বের কথা বলছেন—‘Legitimate Expectation of the People’ বা ‘জনগণের বৈধ প্রত্যাশা’।
তাদের যুক্তি হলো, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান কি কোনো আইন মেনে হয়েছিল? উত্তর হলো, না। বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থান প্রচলিত আইন দিয়ে হয় না। এর ভিত্তি হলো জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছা। যখন দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে একটা পরিবর্তন আনে, তখন সেই পরিবর্তনই নতুন আইন তৈরির বৈধতা দেয়।
গণঅভ্যুত্থান থেকে সংবিধানের পাতায়
নেতারা বলছেন, এই জুলাই সনদ সেই গণঅভ্যুত্থানেরই ফসল। তাই এর শক্তি যেকোনো আইনের চেয়ে বেশি। তবে এই জন-আকাঙ্ক্ষাকে তো একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে, তাই না? আর সেজন্যই একটি যুগান্তকারী প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
জুলাই ঘোষণাপত্র, যা এই গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটকে ধারণ করে, সেটিকে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর মানে হলো, যে গণঅভ্যুত্থান দেশের ইতিহাস বদলে দিয়েছে, তাকে সাংবিধানিক এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এতে করে এই সনদের একটি শক্তিশালী লিগ্যালিটি বা আইনি ভিত্তি তৈরি হবে।
ভিন্নমত, বিতর্ক এবং জাতীয় স্বার্থ
রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকবেই। বিভিন্ন দলের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হবে, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে এক হওয়ার মধ্যেই আসল শক্তি নিহিত। নেতা যেমনটা বলছিলেন, “আমরা তর্ক করব, বিতর্ক করব, ভিন্নমত পোষণ করব, আবার জাতীয় স্বার্থে ঐক্যমত হব।”
এই সনদটি যেন সেই ঐক্যমতেরই প্রতীক হয়ে উঠছে। কে কী বললো বা কোন দল কী ভাবছে, তার চেয়েও বড় হয়ে উঠছে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী একটি জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা।
শেষ কথা: একটি নতুন শুরু?
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ শুধু কয়েকটি কাগজের প্রতিশ্রুতি নয়, এটি একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন। এটি প্রমাণ করে যে, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন তাদের ইচ্ছার চেয়ে বড় কোনো শক্তি থাকে না। এই সনদ যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে এবং একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দেবে। এখন দেখার বিষয়, এই ঐতিহাসিক সম্মতি এবং জনতার রায়কে রাজনৈতিক নেতারা কীভাবে বাস্তবে রূপ দেন।
বাংলাদেশ নিউজ২৪ এর মতামত: এই জাতীয় সনদ কি সত্যিই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন এবং ইতিবাচক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারবে? আপনার মূল্যবান মতামত কী? কমেন্টে আমাদের জানান!
Explore the July National Charter 2025 in Bangladesh. A deep dive into the political consensus, its legal basis, and the debate on people’s will vs law.


