হৃদয়বিদারক ঘটনা: লক্ষ্মীপুরে সড়ক দুর্ঘটনা ৭ নিহত
বন্ধু, তুমি কি জানো, গত বুধবার ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেছে? একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস খালে পড়ে যায়, আর তাতে একই পরিবারের সাতজন সদস্য নিহত হন! ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। ওমানপ্রবাসী ছেলে আবদুল বাহারকে নিয়ে তাঁর পরিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিজেদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে ফিরছিলেন। কিন্তু মাঝপথেই সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। এই সড়ক দুর্ঘটনা পুরো লক্ষ্মীপুর এবং দেশের মানুষের মনে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।
সেই ভয়াল রাতের বর্ণনা: ড্রাইভারের অবহেলায় এত বড় ক্ষতি?
আবদুল বাহার, যিনি এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেছেন, তিনি তাঁর সেই ভয়াল অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। তিনি বলেন, “গাড়িটা খালে পড়ে যেন নৌকার মতো ভাসছিল। আমি ড্রাইভারকে বারবার বললাম দরজার লক খুলে দিতে, যাতে আমরা সাঁতার কেটে বের হতে পারি। কিন্তু সে লক না খুলে নিজেই একটা জানালা দিয়ে বের হয়ে গেল। আমরা কয়েকজন নিজেদের চেষ্টায় জানালা ভেঙে বের হলাম। আমার মা, মেয়েসহ বাকিরা গাড়িতেই শেষ হয়ে গেল!”
একথা শুনে কি তোমার বুকটা মুচড়ে উঠল না? কী নির্মমতা! বাহার আরও জানালেন, কুমিল্লায়ও একবার তাঁদের গাড়ি দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যায়। তখন তাঁরা ড্রাইভারকে বলেছিলেন, প্রয়োজনে একটু ঘুমিয়ে নিতে। কিন্তু মনে হচ্ছে, সেই পরামর্শ তিনি শোনেননি। এই লক্ষ্মীপুরে সড়ক দুর্ঘটনা ৭ নিহত হওয়ার পেছনে চালকের ঘুম ঘুম ভাবই প্রাথমিক কারণ বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। সত্যিই, সামান্য অবহেলা কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, এই ঘটনা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।
কারা হারালেন প্রাণ? শোকস্তব্ধ লক্ষ্মীপুরের কাসারি বাড়ি
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আবদুর রহিমের পরিবারের যে সাত সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁরা হলেন—
- আবদুর রহিমের শাশুড়ি ফয়জুন নেসা (৮০)
- স্ত্রী খুরশিদা বেগম (৫৫)
- পুত্রবধূ কবিতা বেগম (৩০)
- পুত্রবধূ লাবনী বেগম (৩০)
- নাতনি রেশমি আক্তার (১০)
- নাতনি মীম আক্তার (২)
- নাতনি লামিয়া আক্তার (৯)
কল্পনা করতে পারো? ছোট্ট মীম, যার বয়স মাত্র দুই বছর, সেও এই দুর্ঘটনায় মারা গেছে! লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকার কাসারি বাড়িতে এখন শোকের মাতম। আবদুর রহিম তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি, তিন নাতনি ও দুই পুত্রবধূকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। বিছানায় শুয়ে শুধু চোখ দিয়ে নীরবে পানি গড়িয়ে পড়ছে তাঁর। এই দৃশ্য দেখলে তোমারও চোখে জল চলে আসবে, নিশ্চিত। আবদুল বাহার তিন বছর পর ওমান থেকে ফিরেছিলেন তাঁর পরিবারের সাথে আবার মিলিত হতে। কিন্তু এখন তাঁকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে এই কঠিন সত্যের—এক নিমিষেই সবকিছু হারিয়ে গেছে।
সড়ক নিরাপত্তার প্রশ্নচিহ্ন: আর কত প্রাণ ঝরবে?
এই লক্ষ্মীপুরে সড়ক দুর্ঘটনা ৭ নিহত হওয়ার ঘটনা আবারো আমাদের দেশের সড়ক নিরাপত্তার বেহাল দশার কথা মনে করিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, মাইক্রোবাসটিতে চালকসহ মোট ১১ জন ছিলেন। দুর্ঘটনার পর চালকসহ ৪ জন বের হতে পারলেও বাকি ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। বেশিরভাগ নিহতই গাড়ির পেছনের সিটে ছিলেন।
আমরা প্রায়ই শুনি, ড্রাইভারের অসতর্কতা, ঘুম ঘুম ভাব, অথবা অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রশ্ন হলো, আর কত প্রাণ ঝরলে আমরা সচেতন হবো? চালকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে, আর যাত্রীদেরও সচেতনতার সাথে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা এড়িয়ে চলতে হবে। সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এমন মর্মান্তিক ঘটনাগুলো কমিয়ে আনতে।
সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব
চালক এবং যাত্রী উভয়কেই বুঝতে হবে জীবন কতটা মূল্যবান। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময় চালকের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াটা জরুরি। যাত্রী হিসেবে আমাদেরও উচিত চালক ক্লান্ত মনে হলে তাকে বিশ্রাম নিতে বলা। এই ধরনের ছোট ছোট সচেতনতাই অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশ নিউজ২৪ এর মতামত: লক্ষ্মীপুরের এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমরা চাই, এমন ঘটনা আর না ঘটুক। আপনার কী মনে হয়, কীভাবে আমরা সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারি? নিচে কমেন্ট করে আপনার মতামত জানান। এই বিষয়ে আরও জানতে, আপনি পড়তে পারেন আমাদের অন্যান্য প্রতিবেদন: সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয়।
নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের ৭ সদস্য নিহত হয়েছেন। ওমান থেকে ফেরা ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত জানুন এই মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে।


