Gandhi in Noakhali A Journey for Peace

নোয়াখালীতে গান্ধীর ছাগল চুরি: ৭৯ বছরের জনশ্রুতির পেছনের সত্য কী?

নোয়াখালীতে গান্ধীর ছাগল চুরি: জনশ্রুতি নাকি সত্য?

১৯৪৬ সালের নোয়াখালী সফরে মহাত্মা গান্ধীর ছাগল চুরি হয়েছিল—এমনই জনশ্রুতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। কিন্তু ঐতিহাসিক নথি, গান্ধীর আত্মজীবনী, এবং তৎকালীন সংবাদপত্রে এই ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই। তাহলে এই গল্পের উৎস কোথায়? আসুন জেনে নিই ৭৯ বছর আগের সেই সফরের সত্য কাহিনী এবং জনশ্রুতির পেছনের রহস্য。

গান্ধী ও ছাগলের দুধ: একটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব

গান্ধী গরু বা মহিষের দুধ পান থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে মারাত্মক অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ছাগলের দুধ পান শুরু করেন। ১৯৩১ সালে লন্ডন সফরে গিয়েও তিনি ‘নির্মলা’ নামের একটি ছাগল সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে নোয়াখালী সফরে ছাগল চুরির ঘটনা তাঁর আত্মজীবনী বা সফরসঙ্গীদের দিনপঞ্জিতে উল্লেখ নেই。

নোয়াখালীর অশান্ত পটভূমি

১৯৪৬ সালের আগস্টে কলকাতার দাঙ্গার প্রভাব পড়ে নোয়াখালীতেও। হিন্দু-মুসলিম সহিংসতায় ২৮৫ জনের মৃত্যু, অসংখ্য ঘরবাড়ি পোড়ানো, এবং ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে গান্ধী ৭ নভেম্বর নোয়াখালী আসেন। চার মাস ধরে ৪৭টি গ্রাম পরিদর্শন করে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করেন। তাঁর সফরে জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ, এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো নেতারা অংশ নেন。

ছাগল চুরির ঘটনা: কোনো প্রমাণ নেই

গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সচিব রাহা নবকুমার জানান, ছাগল চুরির কোনো প্রমাণ নেই। তৎকালীন সংবাদপত্র, সরকারি প্রতিবেদন, বা গান্ধীর নিজের লেখায় এই ঘটনার উল্লেখ নেই। ব্রিটিশ লেখক অ্যান্ড্রু হোয়াইটহেডের বিবিসি পডকাস্টে স্থানীয় লোকমুখে শোনা কথা উল্লেখ করা হলেও, কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই。

গান্ধীর সফর: সম্প্রীতি ও শান্তির বার্তা

গান্ধী শুধু সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনই করেননি, গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরামর্শ দিয়েছেন। মুসলিম বাড়িতে গিয়ে কালাজ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা করেছেন, মসজিদ পরিদর্শন করেছেন, এবং সব ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করেছেন। তাঁর সফরের পর নোয়াখালীর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়。

জয়াগ গ্রামের জনশ্রুতি

জয়াগ গ্রামে গান্ধীর ছাগল হারানোর কথা শোনা গেলেও, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের নথিতে এর কোনো উল্লেখ নেই। স্থানীয় জমিদার হেমন্ত কুমার ঘোষের বাড়িতে থেকে গান্ধী মুসলিম প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন এবং গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করেন。

গান্ধীর ছাগল চুরি: কেন এই জনশ্রুতি?

গান্ধীর ছাগল চুরির গল্পটি সম্ভবত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময়ে ছড়ানো একটি গালগল্প। কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ না থাকলেও, এই গল্পটি নোয়াখালীর মানুষের মুখে মুখে ফিরে আসে। গান্ধীর সফর ছিল সম্প্রীতি ও শান্তির বার্তা নিয়ে, এবং সেই বার্তাই আজও প্রাসঙ্গিক。

উপসংহার

গান্ধীর ছাগল চুরির ঘটনা সম্ভবত একটি জনশ্রুতি মাত্র। তবে তাঁর নোয়াখালী সফর ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অনন্য উদাহরণ। আজও এই সফর আমাদের শেখায়, শান্তি ও সহনশীলতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ নিউজ২৪-এ পড়ুন গান্ধীর জীবন ও আদর্শ নিয়ে আরও লেখা।

বাংলাদেশ নিউজ২৪ এর মতামত: গান্ধীর ছাগল চুরির ঘটনা নিয়ে আপনার মতামত কী? কমেন্টে জানান!

FAQ

১. গান্ধী কেন নোয়াখালী সফর করেছিলেন?

১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর শান্তি স্থাপনের জন্য গান্ধী নোয়াখালী সফর করেছিলেন। তিনি চার মাস ধরে গ্রামে গ্রামে গিয়ে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

২. গান্ধীর ছাগল চুরির ঘটনা কতটুকু সত্য?

গান্ধীর আত্মজীবনী, সফরসঙ্গীদের দিনপঞ্জি, বা তৎকালীন সংবাদপত্রে ছাগল চুরির কোনো উল্লেখ নেই। এটি সম্ভবত একটি জনশ্রুতি মাত্র।

৩. গান্ধী নোয়াখালীতে কী করেছিলেন?

গান্ধী শান্তি সমাবেশ করেছেন, হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।

১৯৪৬ সালে নোয়াখালী সফরে গান্ধীর ছাগল চুরির ঘটনা কতটুকু সত্য? জানুন ঐতিহাসিক তথ্য, সাক্ষ্য ও গবেষণায় উঠে আসা চমকপ্রদ বিশ্লেষণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top