Political Discussion on RPO Amendment Proposals in Bangladesh

আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবে দলগুলো সন্তুষ্ট, তবে কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি–ভিন্নমত

আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবে দলগুলোর সন্তুষ্টি, তবে আপত্তি ও ভিন্নমত

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আরপিও সংশোধনের চূড়ান্ত প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো মূলত সন্তুষ্ট। বিশেষ করে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনীকে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা এবং ইভিএম বাতিলের দাবি মেনে নেওয়ায় দলগুলো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তবে দলের অনুদান ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ, পুরো আসনের ভোট বাতিল এবং সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা প্রসঙ্গে আপত্তি ও ভিন্নমত রয়েছে।

দলগুলোর সন্তুষ্টির বিষয়

ইসির প্রস্তাবে সশস্ত্র বাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় যুক্ত করা এবং ইভিএম বাতিলের দাবি মেনে নেওয়ায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নাগরিক ঐক্য ও গণসংহতি আন্দোলন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এছাড়া, একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা রাখা এবং ভোট বন্ধে ইসির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাবও দলগুলো স্বাগত জানিয়েছে।

দলীয় অনুদান ও আপত্তি

ইসির প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলের অনুদান ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণের বিধান করা হয়েছে। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মনে করেন, ক্ষুদ্র অনুদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং পদ্ধতি অত্যন্ত কড়াকড়ি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘নেতা-কর্মীরা দলকে যা দেয়, এটি ক্ষুদ্র অনুদান। এর বাইরে রসিদের মাধ্যমেও নেওয়ার অপশন থাকা ভালো।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘চাঁদা দিলে রাজনৈতিক হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার হবেন না, এর নিশ্চয়তা কে দেবে?’ তিনি মনে করেন, সাধারণ মানুষ থেকে এক-দুই শত টাকার চাঁদা গ্রহণের বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

ভোট বাতিল ও সতর্কতা

পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা প্রসঙ্গে বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এটি যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ ও তদন্তসাপেক্ষ। কমিশনকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।’ জামায়াতের নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগের বিপদ থেকে যেতে পারে। তাই যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।’

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘অতীতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণের ঘটনা ঘটেছে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিস্তারিত নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্তে আপিলের সুযোগ থাকা প্রয়োজন।’

‘না’ ভোটের বিধান

ইসির প্রস্তাবে একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এটি প্রথমবারের মতো অনুশীলন হবে, এর গ্রহণযোগ্যতা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।’ তবে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ব্যক্তিগতভাবে ‘না’ ভোটের উপযোগিতা দেখেন না। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন মনে করেন, ‘না ভোটের বিধান সব ক্ষেত্রে থাকলেই ভালো হতো।’

জোটগত ভোটে প্রতীক

ইসির প্রস্তাবে জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নেওয়ার বিধান করা হয়েছে। বিএনপি ও নাগরিক ঐক্য এই প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও জামায়াতের নেতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের মনে করেন, ‘দলগুলোর স্বাধীনতা থাকা উচিত, বাধ্য করা ঠিক হবে না।’ গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দলগুলোর স্বাধীনতা থাকা দরকার।’

সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা

সশস্ত্র বাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় যুক্ত করার প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখেছে বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দল। তবে এনসিপির নেতা আখতার হোসেন বলেন, ‘এটা যেন আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে আইনবহির্ভূত কার্যকলাপের দিকে ধাবিত না হয়, সে ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে।’ জামায়াতের নেতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়মিত বাহিনীর মতো ব্যবহার করলে দীর্ঘ মেয়াদে ফল ভালো না-ও হতে পারে।’

উপসংহার

ইসির আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবগুলো মূলত ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা হলেও, বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে শঙ্কা রয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘ইসির প্রস্তাবের অনেকগুলো আমাদের দাবিও ছিল। কিন্তু সঠিকভাবে আইনের প্রয়োগ করতে পারবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।’

বাংলাদেশ নিউজ২৪-এ পড়ুন আরপিও সংশোধন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আরও বিশ্লেষণ।

বাংলাদেশ নিউজ২৪ এর মতামত: আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবগুলো কতটুকু কার্যকর হবে বলে আপনি মনে করেন? কমেন্টে জানান!

FAQ

১. ইসির আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে?

রাজনৈতিক দলগুলো মূলত সন্তুষ্ট, তবে দলের অনুদান, ভোট বাতিল এবং সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা প্রসঙ্গে আপত্তি ও ভিন্নমত রয়েছে।

২. দলের অনুদান ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণের বিষয়ে কী আপত্তি?

বিএনপি ও গণসংহতি আন্দোলন মনে করে, ক্ষুদ্র অনুদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং পদ্ধতি অত্যন্ত কড়াকড়ি হতে পারে এবং চাঁদা দাতারা রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হতে পারেন।

৩. ‘না’ ভোটের বিধান কেন ফিরিয়ে আনা হয়েছে?

একক প্রার্থী থাকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেওয়াজ বন্ধ করতে ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো মূলত সন্তুষ্ট, তবে দলের অনুদান, ভোট বাতিল ও সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা নিয়ে আপত্তি ও ভিন্নমত রয়েছে। বিস্তারিত জানুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top