শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি সংকটে ধাক্কা খাচ্ছে আস্থা
বন্ধু, তুমি কি খেয়াল করেছ? গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শেয়ারবাজার যেন এক ভয়াবহ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দাম একটু বাড়ে, আবার হঠাৎ বিকেলের দিকে পুরা পতন! এতে বিনিয়োগকারীদের মুখে আর হাসি নেই, আছে কেবল আতঙ্ক আর হতাশা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)—দুই বাজারেই সূচকের এই পতন যেন থেমে নেই। টানা ছয় কার্যদিবসের দরপতন নিছক দুর্ঘটনা নয়, এর পেছনে লুকিয়ে আছে মৌলিক সমস্যা।
ভালো কোম্পানি নেই, তাই বিনিয়োগেও অনিশ্চয়তা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির অভাব বড় সমস্যা। আজ যেসব কোম্পানির শেয়ার আমরা দেখি, তার মধ্যে সত্যিকার অর্থে “ভালো” বলা যায় এমন ২০-২৫টি নামও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
একটা সময় ধারণা করা হচ্ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে, বন্ড মার্কেট শক্তিশালী হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন এখন শুধুই কল্পনা। একটানা ১৩ মাসে বাজারে একটি নতুন কোম্পানিও আসেনি! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তবতা।
প্রশাসনের অবস্থান: আহ্বান জানানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি
বিএসইসি গত ১৫ বছরে ১৩৪টি কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু অধিকাংশই মুনাফা করতে পারেনি। বেশিরভাগই এখন জেড ক্যাটাগরির সদস্য। এটি প্রমাণ করে, শুধু সংখ্যা বাড়ালেই কাজ হবে না—প্রয়োজন মানসম্পন্ন কোম্পানি।
ভালো কোম্পানি বাজারে আসতে চায় না কেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলছেন, অনেক প্রাইভেট কোম্পানির মনোভাব এখনো রক্ষণশীল। তারা শেয়ারবাজারে আসতে ভয় পান, কারণ এতে করপোরেট স্বচ্ছতা আর ভালো ব্যবস্থাপনায় যেতে হয়। অথচ এরাই হতে পারে বাজারে প্রাণ ফেরানোর মূল চালিকাশক্তি।
কী করছে সরকার ও বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো?
- প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নির্দেশনায় নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
- বিএসইসি আইপিও রুলস সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।
- একাধিক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে তালিকাভুক্তি ত্বরান্বিত করার জন্য।
তবে বাস্তবতা হলো, চলমান দুরবস্থার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি এখনও দেখা যায়নি।
চিহ্নিত হয়েছে যেসব সরকারি কোম্পানি
সরকার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে আনার চিন্তা করছে—যেমন নর্থওয়েস্ট পাওয়ার, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড, ছাতক সিমেন্ট ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ইত্যাদি। কিন্তু এসব উদ্যোগে কার্যকর অগ্রগতি দেখতে এখনও অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
মূল তথ্য
শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি না থাকলে কী প্রভাব পড়ে?
ভালো কোম্পানির অভাবে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চান না, বাজারে তরলতা কমে যায়, সূচক পড়ে যায় এবং বাজারে আস্থা নষ্ট হয়। এক কথায়, পুরো পুঁজিবাজার দুর্বল হয়ে পড়ে। BSEC ওয়েবসাইটে বিস্তারিত নীতিমালা দেখা যেতে পারে।
নতুন কোম্পানিগুলো কেন এগিয়ে আসছে না?
কোম্পানিগুলোর অনেকেই করপোরেট স্বচ্ছতার দিকে যেতে চান না এবং আইপিও তে যেতে প্রশাসনিক ধাপগুলো কঠিন ও সময়সাপেক্ষ মনে করেন।
উপসংহার
শেয়ারবাজারের চলমান সংকট নিরসনে এখনই ভালো কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি জরুরি। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে, তরলতা বাড়াতে এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনতে এটা অপরিহার্য।
আরও বিশ্লেষণ পড়তে ভিজিট করুন বাংলাদেশ নিউজ২৪।
শেয়ারবাজারে নিঃসন্দেহে একটি নতুন সূচনার প্রয়োজন। আসুন, আমরা সবাই মিলে দাবি তুলি—ভালো কোম্পানিগুলো যেন দ্রুত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
বাংলাদেশ নিউজ২৪ এর মতামত: আপনি কী মনে করেন, কোন খাতের ভালো কোম্পানিগুলো এসে বাজারে গভীরতা আনতে পারে? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না!
FAQ
বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে কয়টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে?
বর্তমানে করপোরেট ও ট্রেজারি বন্ড বাদ দিলে ৩৬৮টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।
সর্বশেষ কোনো কোম্পানি কবে তালিকাভুক্ত হয়েছে?
২০২৪ সালের জুনে ‘টেকনো ড্রাগস’ কোম্পানি সর্বশেষ আইপিও নিয়ে বাজারে আসে।
ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে আগ্রহী নয় কেন?
তারা করপোরেট স্বচ্ছতা, করের নিয়ম, ও ব্যবস্থাপনাগত চাপের কারণে শেয়ারবাজারে আসতে চান না।
সরকারের কী উদ্যোগ আছে সমস্যা সমাধানে?
সরকার নতুন আইপিও নীতিমালা করছে, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হচ্ছে এবং কিছু সুনির্দিষ্ট কোম্পানি চিহ্নিত হয়েছে তালিকাভুক্তির জন্য।
শেয়ারবাজারে টানা দরপতন ও ভালো কোম্পানির অভাব বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। জেনে নিন কেন নেই নতুন কোম্পানির আগমন।