শিরোনাম :
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের একাদশ ঘোষণা নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ঘোষণা আসছে আজ দুই ম্যাচ হেরেও সেমিফাইনালের স্বপ্নে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় কামনা করছে পাকিস্তান সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পরিমাণে পরিবর্তন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে মিরাজ! মুশফিকসহ ৩ পরিবর্তন হতে পারে পাকিস্তানের হার, সেমিফাইনালে বাংলাদেশের পথ এখন পানি মত সহজ সৌদি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর সহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রার আজকের বিনিময় হার আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি, দেখেনিন আজকের সকল দেশের টাকার রেট আরো কমে গেল ডলারের বিনিময় রেট এবার এল সৌদি প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ

আজ শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল হওয়ার উপায়

  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

দোয়া হলো একটি বিশেষ ইবাদত, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে তার প্রয়োজনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করে। ইসলামে দোয়ার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, এবং এটা বান্দার আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক গঠনের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করার জন্য সদা প্রস্তুত, তবে কিছু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দোয়া বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে, যেগুলোর মধ্যে শবে বরাতের রাত অন্যতম।

শবে বরাতে, বা মধ্য শাবান, সেই রাত যা বিশেষ করে দোয়া কবুলের জন্য পরিচিত। এটি ইসলামী ক্যালেন্ডারের ১৪ শাবান রাতে সংঘটিত হয় এবং মুসলমানদের জন্য এক অনন্য সুযোগ, যখন তারা আল্লাহ তায়ালার রহমত ও ক্ষমা লাভের জন্য দোয়া করতে পারে। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা সমস্ত সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সকলের পাপ ক্ষমা করে দেন। এই রাতে বান্দা যদি তার পাপ ও ভুলের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চায়, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তার দোয়া কবুল করেন।

শবে বরাতে দোয়া কবুলের বিষয়ে ইমাম শাফেয়ী রহ. এর মন্তব্য

ইমাম শাফেয়ী রহ. তাঁর রায় প্রদানকালে পাঁচটি বিশেষ রাতের কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলোর মধ্যে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন—

“পাঁচটি রাত আছে যেগুলোর মধ্যে দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। তা হল: রজবের প্রথম রাত, ঈদের দুটি রাত, জুমার রাত, এবং শবে বরাতের রাত।” (ইবনে রাজাবের ‘লাতায়েফুল মাআরিফ’, পৃষ্ঠা ১৩৭)

এটি ইমাম শাফেয়ী রহ. এর মতে মুসতাহাব (প্রশংসনীয়) এবং এটি একজন মুসলমানের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। শবে বরাতে, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে তাঁর অনুগ্রহ ও দয়া বর্ষণ করেন এবং বান্দাদের প্রতি বিশেষ আর্শীবাদ প্রদান করেন।

এই রাতে আল্লাহ তায়ালা সকল পাপী বান্দার জন্য ক্ষমা প্রদানের সুযোগ দেন, শুধুমাত্র মুশরিক (যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোনো সত্ত্বা বা শক্তি বিশ্বাস করে) এবং বিদ্বেষ পোষণকারীদের জন্য এই ক্ষমা প্রার্থনা সীমিত থাকে।

মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে:
“নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে, অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে, তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।'” (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

এই হাদিসের মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, শবে বরাতের রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য এক অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করেন, যাতে তারা নিজের ভুল ও পাপের জন্য তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভ করতে পারে। এই রাতটি, বিশেষত যারা অনুতপ্ত এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা চায়, তাদের জন্য আল্লাহর দয়া ও রহমতের রাত্রি।

ইমাম শাফেয়ী রহ. এর জীবনী:

ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর জন্ম ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে, ১৫০ হিজরীতে, ফিলিস্তিনের গাজা শহরে। তিনি ছিলেন ইসলামী জ্ঞান ও ফিকহের (আইন) একজন মহান আলেম। তাঁর পুরো নাম ছিল মোহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস ইবনে আব্বাস ইবনে উসমান ইবনে শাফেয়ী। মাত্র দু’বছর বয়সে তিনি মক্কায় চলে যান এবং সেখানে শৈশবকালেই আল-কুরআন হেফজ করেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি ইমাম মালেক রহ.-এর ‘মুওয়াত্তা’ হাদীসের গ্রন্থটি পুরোপুরি মুখস্থ করেন।

ইমাম শাফেয়ী রহ. ছিলেন একজন বিশিষ্ট ফকীহ এবং ইসলামী আইনের শাফেয়ী মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা। পনেরো বছর বয়সে তিনি ফতোয়া দেওয়ার কাজ শুরু করেন। তাঁর এই বিশেষ জ্ঞান, পাণ্ডিত্য ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি মুসলিম সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি ইসলামিক ফিকহের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিতাব লিখেছেন, যার মধ্যে “অল-উম” অন্যতম।

ইমাম শাফেয়ী রহ. ইসলামী আইনের একটি সম্পূর্ণ নীতি ও প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেন, যা শাফেয়ী মাজহাব নামে পরিচিত। তাঁর শাফেয়ী মাজহাব আজও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুসৃত হয়ে থাকে এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পথনির্দেশক হিসেবে বিবেচিত।

ইমাম শাফেয়ী রহ. তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার প্রতি অটুট বিশ্বাস ও একাগ্রতা বজায় রেখেছিলেন। তাঁর জীবন ছিল একটি উদাহরণ, যেখানে ঈমান, জ্ঞান, দোয়া, তওবা এবং আল্লাহর প্রতি প্রেম ছিল মূল ভিত্তি।

শবে বরাতের মতো মহিমান্বিত রাতে, আমরা যদি আন্তরিকভাবে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করি, তবে আল্লাহ আমাদের পাপ মাফ করবেন এবং আমাদের জীবনে রহমত বর্ষণ করবেন। ইমাম শাফেয়ী রহ. এর শিক্ষাগুলি আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করবে, যাতে আমরা আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারি এবং তাঁর রহমতের প্রাপ্তি লাভ করতে পারি।

অন্যরা যা পছন্দ করছে
© All rights reserved © 2024 bdnews24us.com