সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনী সম্প্রতি ১৩ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত এক বৃহৎ অভিযানে ২১ হাজার ২২২ জন অবৈধ প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযান পরিচালনার বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয় যে, গ্রেপ্তারকৃত প্রবাসীরা আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত সুরক্ষা আইন লঙ্ঘন করেছেন।
এদিকে, এই অভিযানের মাধ্যমে ১০ হাজারেরও বেশি অবৈধ প্রবাসীকে দেশে ফিরিয়ে পাঠানো হয়েছে। সৌদি আরবের কঠোর আইন অনুযায়ী, যারা দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থান করেন, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত প্রবাসীদের মধ্যে আবাসন আইন ভঙ্গকারী ১৩,২০২ জন, সীমান্ত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনকারী ৪,৯১১ জন, এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনকারী ৩,১০৯ জন। এর পাশাপাশি, সৌদি আরবের সীমান্তে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে ১,৩৭৬ জনকে আটক করা হয়।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, এই অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৫৮ শতাংশই ইথিওপিয়ান, ৪০ শতাংশ ইয়েমেনি, এবং কিছুসংখ্যক অন্যান্য দেশের নাগরিক রয়েছেন। সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনী এই ধরনের অভিযান জোরালোভাবে চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় যে, বর্তমানে ৪০,৫০০ প্রবাসী সম্পর্কে আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, এবং তাদের মধ্যে ৪,৩০০ জন নারী। এই প্রবাসীদের প্রত্যাবাসনও দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া, সৌদি আরবে অবৈধভাবে প্রবেশে সহায়তা প্রদানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে। সৌদি সরকার নিয়মিতভাবে এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দেয় এবং প্রবাসীদের নিরাপদ ও আইনসম্মতভাবে সৌদি আরবে প্রবেশ করার আহ্বান জানায়।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি বিশ্বের অন্যতম বড় প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মস্থল। বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ মানুষ বসবাস করছে এবং দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকটাই প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল। এই শ্রমিকরা সৌদির বিভিন্ন শিল্প, নির্মাণ, পরিষেবা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অন্যান্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, সৌদি আরবের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিতভাবে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসীদের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগও নিয়েছে। এসব অভিযান অবৈধ অভিবাসন ও শ্রমবাজারের শোষণ রোধ করতে সাহায্য করছে, যার ফলে সৌদি আরবে বিদেশি শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ অনেক উন্নত হতে পারে।
এই অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৩০,৮৭৪ জন প্রবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আরও ৩,৯১০ জন প্রবাসীর ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে সৌদি সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শ্রম বাজারে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করছে, যা দেশটির সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।