নিজস্ব প্রতিবেদক: মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ সম্প্রতি একটি ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে, যার ফলস্বরূপ ৮৫ বাংলাদেশি নাগরিকসহ মোট ৫৯৮ জন অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার ভোররাতে সেলাঙ্গর রাজ্যের ক্লাং শহরের পাসার মেরু মার্কেট কমপ্লেক্সে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। অভিযানে আটককৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশই বাংলাদেশের পাশাপাশি মিয়ানমার, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং নেপাল থেকেও এসেছেন।
মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (অপারেশনস) জাফরি এমবোক তাহা জানিয়েছেন যে, অভিযানের সময় ৬৩০ জন ব্যক্তির কাগজপত্র যাচাই করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৯৮ জনের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ৮৫ জন বাংলাদেশি, ৫০০ জন মিয়ানমারের নাগরিক, ৭ জন ইন্দোনেশিয়ান, ৫ জন ভারতীয় এবং ১ জন নেপালি নাগরিক ছিলেন। এ অভিযানকে ইমিগ্রেশন বিভাগের বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আটককৃতদের সেমেনিহ ইমিগ্রেশন ডিপোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় অভিবাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু অভিবাসী যারা অভিযান থেকে বাঁচতে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেছিলেন, তাদেরও ধরা পড়ে। তবে, আটকদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে শিগগিরই আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের পরিচয় জানানো হবে।
মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর অভিবাসন বিভাগের পরিচালক খায়রুল আমিনাস কামারুদ্দিনের নেতৃত্বে ১৫৩ জন কর্মকর্তা এই অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে আরও সহযোগিতা প্রদান করেছেন রয়েল ক্লাং সিটি কাউন্সিলের (এমবিডিকে) মেয়র দাতুক আবদ হামিদ হুসেন, জাতীয় নিবন্ধন বিভাগ (এনআরডি), জেআইএম অফিসার এবং জেনারেল অপারেশনস টিম (পিজিএ)। অভিযানে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা সফলভাবে আটককৃতদের আইনি প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করছেন।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, চলমান অভিযানে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে মালয়েশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার হিসেবে পরিচিত, যার ফলে এখানে বহু অভিবাসী কাজের জন্য আসেন। কিন্তু অবৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীরা দেশের আইন ভঙ্গ করছেন, যা দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।
দেশটির অভিবাসন বিভাগ জানিয়েছে, অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের যাতে আইনি ঝামেলায় না পড়তে হয়, সেই জন্য তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে তারা বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করে কাজ ও বসবাসের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়া, ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযান আরো জোরদার হতে পারে এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অভিবাসীদের জন্য এটি একটি বড় সতর্কবার্তা। যারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন, তাদের জন্য আইনগত জটিলতা এড়ানোর উপায় হিসেবে বিশেষভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা দ্রুত বৈধ কাগজপত্র সংগ্রহ করে এবং কোনো ধরনের আইনি জটিলতায় না পড়ে। যারা এখনো অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তারা যেন তাদের অবস্থা পরিষ্কার করতে এবং দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে চেষ্টা করেন।
মালয়েশিয়ায় কাজ ও বসবাস করার জন্য প্রয়োজনীয় ভিসা বা শ্রমিক পারমিট গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মালয়েশিয়ার সরকার শীঘ্রই আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে, যার ফলে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সমস্যা আরো বাড়তে পারে।
যারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন, তাদের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হল দ্রুত আইনি কাগজপত্র সংগ্রহ করা। বৈধভাবে এখানে কাজ করতে হলে অভিবাসীদের উচিত মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন আইন অনুসারে নথিপত্র প্রস্তুত করা এবং সঠিকভাবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা।
মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তারা অভিবাসীদের পরামর্শ দিয়েছেন যে, তারা যেন অবিলম্বে বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং যদি কোনো সমস্যা থাকে তবে সেগুলির সমাধান করতে প্রস্তুত থাকেন।
এখানে বসবাসকারী অভিবাসীদের জন্য প্রধান সতর্কবার্তা হলো: অবৈধভাবে বসবাস বা কাজ করা দেশের আইন ভঙ্গ করা এবং এর ফলে তাদের জীবনে বড় ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং, সবাইকে তাদের বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আয়শা/